যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের সমালোচনায় কারজাই

বিদায়ী ভাষণে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের খোলামেলা সমালোচনা করেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2014, 01:27 PM
Updated : 23 Sept 2014, 01:41 PM

নিজ দেশের সংঘাত-প্রাণহানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কূটকৌশল ও পাকিস্তানের কর্তৃত্বমূলক পররাষ্ট্রনীতিকে সরাসরি দোষারোপ করেন ১৩ বছর ধরে কাবুল শাসনকারী এই রাষ্ট্রপ্রধান।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক সেনা অভিযানে তালেবান সরকারের পতনের পর ২০০১ সালে আফগানিস্তানের দায়িত্বে আসেন কারজাই। তালেবান জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলা ও বিভিন্ন রাজ্যে আদিবাসী নেতাদের প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তানসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করেই ১৩ বছর পার করতে হয়েছে তাকে।

সম্প্রতি নির্বাচনে আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট হন সাবেক অর্থমন্ত্রী আশরাফ গনি। ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে মঙ্গলবার বিদায়ী ভাষণ দেন কারজাই।

ভাষণে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে অনুজ প্রেসিডেন্টকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন বিদায়ী আফগান প্রেসিডেন্ট।

বিবিসি জানায়, তালেবান জঙ্গিদের দমন করতে নেটো বাহিনীর ৫০ হাজার সেনা এখনো আফগানিস্তানে অবস্থান করছে। এদের মধ্যে ত্রিশ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা রয়েছে। বাকি সেনারা নেটোর অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের।

নতুন চুক্তি না হলে চলতি বছরের শেষদিকেই আন্তর্জাতিক বাহিনীকে আফগানিস্তান ছাড়তে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সেনাদের আফগানিস্তানে রাখতে নতুন একটি চুক্তি করতে চাইলেও তাতে রাজি হননি প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই।

উল্টো যুক্তরাষ্ট্র তার দেশে সামরিক প্রভাব ধরে রাখতে ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বন্দ্ব-সংঘাত জিইয়ে রেখেছে বলে বিদায়ী ভাষণে দাবি করেন তিনি।

আফগানিস্তানের নির্বাচিত প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তালেবান। হামলা পাল্টা-হামলায় প্রতিবছর দেশটিতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হচ্ছে। তালেবান ও আফগান সেনাদের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদেশগুলোর ২২শ’রও বেশি সেনা নিহত হয়।

কারজাই বলেন, “এর একটি কারণ হচ্ছে, আমেরিকা এই অঞ্চলে শান্তি চায় না। কারণ আফগানিস্তান নিয়ে তাদের নিজস্ব একটি পরিকল্পনা ও দুরভিসন্ধি রয়েছে।”

আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানও খেলছে বলে মন্তব্য করেন কারজাই।

“আজ আমি আবারও আপনাদেরকে বলছি যে, আফগানিস্তানে এমনি এমনি যুদ্ধ হচ্ছে না। এ যুদ্ধ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, আমরা ঘটনার শিকার। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা পাকিস্তানের সদিচ্ছা না হলে আমাদের দেশে কোনো শান্তি আসবে না।”

এর আগেও বিভিন্ন বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছিলেন কারজাই। তবে মঙ্গলবারের বিদায়ী ভাষণে তার বক্তব্য ছিল আগের চেয়ে স্পষ্ট ও ইঙ্গিতমূলক।

এদিন আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে মার্কিন বিমান হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং জঙ্গি সন্দেহে আফগান নাগরিকদেরকে আটক রাখারও সমালোচনা করেন কারজাই।

আফগানিস্তানের তালেবান নেতারা পাকিস্তানের আশ্রয়ে রয়েছে জানিয়ে কারজাই বলেন, এ নিয়ে আলোচনা করতে তিনি পাকিস্তানে গেলেও কোনো সহায়তা পাননি।

কারজাইয়ের ওই ভাষণ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি কাবুলে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস।

যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছায় ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তান তালেবান উত্তর সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কারজাই। প্রথম দিকে অনির্বাচিত থাকলেও ২০০৫ সালে নামেমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হন তিনি। ২০০৯ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন। তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে চলতি বছরের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।

প্রায় ছয় মাস ধরে চলা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন আশরাফ গনি। নির্বাচনের ভোট গণনা নিয়ে বিরোধ শুরুর পর আলোচনা করে পরাজিত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তি করেন গনি।