পার্লামেন্টের সমর্থন পেলেন নওয়াজ শরীফ

পাকিস্তানে সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে পার্লামেন্ট।

>>রয়টার্স
Published : 2 Sept 2014, 03:09 PM
Updated : 2 Sept 2014, 05:15 PM

ইসলামাবাদের রাজপথে টানা তিনদিন ধরে চলা সহিংসতার মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে পার্লামেন্টে যৌথ অধিবেশন আহ্বান করেন নওয়াজ। তাছাড়া, সব পার্লামেন্ট সদস্যদের মতামত জানতে গোটা সপ্তাহই অধিবেশন চলবে বলে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে।

মঙ্গলবার অধিবেশনের প্রথম দিনেই সরকার ও বিরোধীদলীয় বেশিরভাগ পার্লামেন্ট সদস্যই ঐকান্তিকভাবে নওয়াজের প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রতি নিজেদের আস্থার কথা বলেন।

এছাড়া তার পদত্যাগ দাবিতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ইসলামাবাদে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকা পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও পাকিস্তান আওয়ামি তেহরিক (পিএটি) নেতাকর্মীদের তীব্র সমালোচনা হয় পার্লামেন্টে। পিটিআই নেতা ইমরান খান ও টিএনটি প্রধান কানাডা প্রবাসী ধর্মীয় নেতা তাহির উল কাদরিরও সমালোচনা করেন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্যরা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেন, “এটা কোনো বিক্ষোভ, গণঅবস্থান কিংবা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নয়। এটা একটা বিদ্রোহ। এটা পাকিস্তান রাষ্ট্র ও সংবিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।”

তিনি আরো বলেন, “পার্লামেন্টের পরিষ্কার দিক নির্দেশনা থেকে পুলিশ আরো শক্তিশালী ভূমিকা নিতে পারবে ….. তারা (বিক্ষোভকারীরা) বিপ্লবী নয়, তারা হঠকারী, সন্ত্রাসী”।

ওদিকে, বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য ইজাজ আহসান প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি যেহেতু বলেছেন পদত্যাগ করবেন না, সুতরাং কেউ আপনাকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারবে না। পুরো পার্লামেন্ট আপনার সঙ্গে আছে।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিরা রাজপথে ইমরান খান ও তাহির উল কাদরির নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করার সময় নওয়াজ মনোযোগ সহকারে তা শোনেন এবং নোট নেন। তবে এদিন পার্লামেন্টে কোনো বক্তব্য রাখেননি তিনি।

নওয়াজের কার্যালয় থেকে বলা হয়, চলতি সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত পার্লামেন্টের অধিবেশন চলবে। সব পার্লামেন্ট সদস্য বক্তব্য দেয়ার পর তিনি বক্তব্য দিতে পারেন।

দুর্নীতি ও গত নির্বাচনে বিপুল কারচুপির অভিযোগ এনে গত দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানী ইসলামাবাদে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছে সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও কানাডা প্রবাসী ইসলামি চিন্তাবিদ তাহির উল কাদরির দল পাকিস্তান আওয়ামি তেহরিক (পিএটি)।

সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমঝোতার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর মধ্যেস্ততায় যোগ দেয় সেনাবাহিনী। এর ফলে দেশটিতে প্রভাবশালী সেনাবাহিনী আবারও ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে বলে দেশের ভেতর ও বাহিরে গুঞ্জন শুরু হয়।

রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে সেনাবাহিনীর এগিয়ে আসার সমালোচনা হয় বিভিন্ন মহলে। তবে কর্তৃপক্ষের ইঙ্গিত পেয়েই সেনাবাহিনী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বলে পরে এক বিবৃতিতে দাবি করে।

শনিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। আহত হয়েছে পুলিশসহ পাঁচ শতাধিক বিক্ষোভকারী।

সোমবার সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দেশটির জাতীয় টেলিভিশন ভবনে পিটিভি হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। হামলার কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে পিটিভি ও পিটিভি ওয়ার্ল্ড এর সম্প্রচার। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদেরকে ওই ভবন থেকে বের করে দিলে সম্প্রচার আবার শুরু হয়।

ইমরানের দলে ভাঙন

শনিবার রাতে ইসলামাবাদের কূটনীতিক পাড়ায় অবস্থান নেয়া আন্দোলনকারীরা নওয়াজ শরীফের বাসভবন ভাংচুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে আন্দোলনকারীদেরকে হঠকারি কাজের নির্দেশ দেয়ার কারণে পিটিআই’র সভাপতি জাভেদ হাশমির সঙ্গে ইমরানের বিরোধ শুরু হয়।

ইমরান জাভেদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। তবে ইমরান খান ‘অজ্ঞাত স্থান থেকে আসা একটি এসএমএস’ এ নির্দেশ পেয়ে কর্মীদেরকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন জাভেদ।
মঙ্গলবার পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হলে জাভেদও সেখানে উপস্থিত হন। এসময় মুহূর্মুহু করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান পার্লামেন্ট সদস্যরা।

এদিনও বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের সমালোচনা করেন জাভেদ। তবে তার পদত্যাগ নিয়ে কোনো বাক্য উচ্চারণ করেননি জাভেদ।

লাভবান হচ্ছে সেনাবাহিনী?

সরকার ও আন্দোলনকারীদের অনড় অবস্থান এবং দ্বন্দ্ব নিরসনে সেনাবাহিনীর তৎপরতার কারণে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাবাহিনী আবারও ক্ষমতা দখল করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করেছেন।

অনেকে বলছেন, সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচিত সরকারকে দুর্বল করছে সেনাবাহিনী। তারা নওয়াজকে সেনাবাহিনী ওপর আরো নির্ভরশীল করে তুলছে। এছাড়া, প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে সেনারা নাক গলানোর সুযোগ পেয়ে বসছে বলেও মনে করা হচ্ছে।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের যে পরিকল্পনা নওয়াজ হাতে নিয়েছেন তার সঙ্গে একমত নয় সেনাবাহিনী। এছাড়া, আদিবাসী অঞ্চলের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সেনারা যে অভিযান চালাচ্ছে তাতেও দ্বিমত রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

এর আগে ১৯৯৯ সালেও নওয়াজকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশাররফ। তবে এবার ক্ষমতায় আসার পর নওয়াজ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা করেন মুশাররফের বিরুদ্ধে। মুশাররফকে বিচারের মুখোমুখি করার কারণে নওয়াজ প্রশাসনের ওপর নাখোশ সেনাবাহিনী।