পাকিস্তানের রাজনীতিতে ‘এক-এগার মডেল’

পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের পেছনে ‘বাংলাদেশ মডেল’ কাজ করছে বলে ধারণা করছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

নিউজ ডেস্ক>>বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2014, 07:45 AM
Updated : 2 Sept 2014, 08:03 AM

পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রেসিডেন্ট জাভেদ হাশমির বিস্ময়কর এক অভিযোগের সূত্র ধরে এ ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে বলে সোমবার জানিয়েছে দ্য ডন।

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে হাশমি দাবি করেছেন, এ ধরনের আন্দোলনের একটি ছক আগেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ইমরান ওই পরিকল্পনা প্রকাশ করে সেপ্টেম্বরে নির্বাচন হবে এবং সবকিছু ঠিক হয়ে আছে বলে জানিয়েছিলেন।

হাশমি বলেন, “পিটিআই’র কেন্দ্রীয় কমিটিকে ইমরান বলেছেন, এটিকে সামরিক শাসন বলা যাবে না।”

হাশমির এই উক্তিতে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান ও পাকিস্তান আওয়ামি তেহরিকের (পিএটি) প্রধান তাহির-উল-কাদরিকে ব্যবহার করে পরোক্ষে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিচ্ছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ

এতে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করে বেসামরিক প্রশাসনের ছদ্মবেশে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ‘বাংলাদেশ মডেল’ অনুসরণ করা হচ্ছে বলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ধারণা ছড়িয়ে পড়ে।
কথিত ‘বাংলাদেশ মডেল’ একটি নমনীয় ক্যু। জনকল্যাণের জন্য রাজনৈতিক পদ্ধতিকে দুর্নীতিমুক্ত করার ধারণার উপর এটি প্রতিষ্ঠিত। এই ধারণায় প্রচলিত রাজনৈতিক পদ্ধতিতে সৎ নেতৃত্ব নির্বাচন সম্ভব নয় বলে ধরে নেয়া হয়।
অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগকে ‘সঠিক’ থেকে ‘ভুল’ আলাদা করতে সাহায্য করার জন্য হস্তক্ষেপ করা দরকার, এমন যুক্তিকে সামনে রেখে এই প্রক্রিয়া কাজ শুরু করে।
এই মডেলে দাবি করা হয়, গণতন্ত্র এই ধরনের ‘শুদ্ধি’ অভিযানের ভিতর দিয়ে গেলে সত্যিকার রূপ পায়, এতে জনগণ সঠিকভাবে ‘নির্দেশিত’ হয়ে যাচাইবাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের সঙ্গে মিলে টেকনোক্র্যাট, বর্তমান ও সাবেক সরকারি আমলারা মিলে এই ‘বাংলাদেশ মডেল’ বাস্তবায়ন করতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এতে সামনে থাকা একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নেপথ্যের কলাকুশলীরা পরিচালনা করেন।
২০০৭ সালে বাংলাদেশে এ ধরনের নমনীয় ক্যু হয়েছিল বলে একে ‘বাংলাদেশ মডেল’ বলা হয়- জানিয়েছে দ্য ডন।
রাজনৈতিক সঙ্কটের জেরে বাংলাদেশে ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সাবেক আমলা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে এবং প্রায় দুইবছর ক্ষমতায় থেকে তারা নানা সংস্কার চালানোর চেষ্টা করে।
শনিবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে ইসলামাবাদভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলেছিলেন, “নওয়াজ শরিফ যদি ক্ষমতায় থেকেও যায়, বাকি মেয়াদ তাকে আনুষ্ঠানিক প্রধানমন্ত্রী হয়েই থাকতে হবে-বিশ্ব তাকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করবে না।”
“একটি নমনীয় ক্যু ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হল কখন এটি আত্মপ্রকাশ করবে,” বলেন তিনি।
গত সপ্তাহে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) পাকিস্তানে ‘নমনীয় ক্যু’ হতে পারে বলে সতর্ক করেছিল।