দুই শীর্ষ খেমার রুজ নেতার যাবজ্জীবন

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কম্বোডিয়ার দুই শীর্ষ খেমার রুজ নেতাকে আজীবন কারাবাসের দণ্ডে দণ্ডিত করেছে দেশটির জাতিসংঘ সমর্থিত ট্রাইব্যুনাল।

নিউজ ডেস্ক>>বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2014, 04:44 AM
Updated : 7 August 2014, 11:45 AM

দেশটির মাওবাদী সাবেক শাসক পল পটের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এই দুই খেমার রুজ নেতা।

তাদের একজন নুওন চে, যিনি ছিলেন পল পটের ডেপুটি। কম্বোডিয়ার মানুষ তাকে চিনত ‘ব্রাদার টু’ নামে। আর অন্যজন দেশটির তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান খিউ সাম্ফান।

ব্রাদার ওয়ান নামে পরিচিত পল পটের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল সেনাবাহিনীকে হটিয়ে খেমার রুজ গেরিলারা তত্কালীন কম্পুচিয়ার রাজধানী নমপেন দখল করে নেয়। নমপেন দখল করে পল পট সরকার মূলত কৃষি সংস্কারের নামে ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ চালায়। পল পট ১৯৯৮ সালে কম্বোডিয়ার জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় মারা যান।

কম্বোডিয়ার মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে খেমার রুজের বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধ অপরাধ এবং মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খেমার রুজের শাসনামলে কম্বোডিয়ায় ১৭ লাখ মানুষ নির্যাতন, প্রাণদণ্ড এবং অনাহারে মারা যান। এই সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার এক চর্তুথাংশ।

বিবিসি বলছে, খেমার রুজ শাসনামলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের দণ্ডিত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসীদের বিরুদ্ধে যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল খেমার রুজদের বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে তার চেয়ে জটিল বলে অনেকে অভিহিত করেছেন।

এ বিচার দেখার জন্য খেমার রুজ শাসকদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর আগে নুওন চে এ বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসন বলে মন্তব্য করেছিলেন।

খেমার রুজের শাসনামলে শহরগুলো খালি করে ফেলা হয়েছিল। কৃষিনির্ভর সমাজ বিনির্মাণে খেমার রুজের লক্ষ্য বাস্তবায়নে শহরের অধিবাসীদের গ্রামে সমবায়ভিত্তিক কাজে নিয়োজিত করা হয়েছিল। তখন অনেকেই কাজ করতে গিয়ে মারা গেছেন।

চারবছরের ভয়াবহ শাসনের সময় সম্ভাব্য শত্রু অনুমানে বুদ্ধিজীবী, সংখ্যালঘু, সাবেক কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়।

নুওন চে সরকারে থাকাকালীন খেমার রুজের আদর্শিক বিষয়গুলো পরিচালনা করতেন। আর খিউ সাম্ফানকে সামনে রেখেই এসবকিছু বাস্তবায়ন করা হতো।

প্রায় তিন বছর ধরে বিচার চলার পর তাদের অভিযুক্ত করে এই রায় দিল ট্রাইব্যুনাল। সেখানে খেমার রুজের শাসনামলে নির্যাতনের শিকার ও স্বজন হারাদের মর্মস্পর্শী বক্তব্য শোনা হয়।

তবে দণ্ডিত দুই নেতাই তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বার বার অস্বীকার করে গেছেন।

তাদের সঙ্গে সাবেক দুই খেমার রুজ সরকারের মন্ত্রীরও বিচার শুরু হয়েছিল।

২০১৩ সালের মার্চে সাবেক খেমার রুজ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেঙ স্যারি মারা যান। আর তার স্ত্রী সাবেক সমাজমন্ত্রী লেঙ তিরিতকে বয়সজনিত কারণে ট্রাইব্যুনাল বিচারের অযোগ্য ঘোষণা করে।

এর আগে খেমার রুজ নেতা ডাচের আপিল আবেদন প্রত্যাখ্যান করে তাকে আজীবন কারাবাসের দণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। প্রথমে তাকে ৩৫ বৎসর কারাবাসের দণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

কমরেড ডাচ নামে পরিচিত কায়েং গুয়েক এভ -এর বিরুদ্ধে একটি জেলখানার কয়েক হাজার বন্দিকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত মাওবাদী দল খেমার রুজ কম্বোডিয়ার ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি তুওল স্লেঙ্গ কারাগারের প্রধান ছিলেন। ওই কারাগারে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বন্দি ১৫ হাজার পুরুষ, নারী ও শিশুকে নির্মম অত্যাচারের পর রাজধানী নমপেনের বাইরে বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করা হয়।

ঘটনার সময় তিনি জেলখানার একজন নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন এবং ঊর্ধ্বতনদের আদেশ পালনে বাধ্য হয়েছিলেন, এই আর্জি জানিয়ে তিনি ২০১১ সালের মার্চে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।

কিন্তু ট্রাইব্যুনাল ৬৯ বছর বয়স্ক কমরেড ডাচের আবেদন খারিজ করে উল্টো দণ্ড বাড়িয়ে দেয়। তার কারাবাসের মেয়াদ ৩৫ বছর থেকে বাড়িয়ে আমৃত্যু কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেয়া হয়।

কম্বোডিয়াতে ‘ইয়ার জিরো’ নামে একটি নতুন আদর্শভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন পল পট ও খেমার রুজ গেরিলারা। তাতে সভ্যতা আবার নতুন করে শুরু হবে। আগের সমাজের সব মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে নতুন এক সংস্কৃতি দিয়ে শুরু হবে কম্বোডিয়া- এই ছিল তাদের আদর্শের মূল কথা। আর এই আদর্শ বাস্তবায়নের পথে মূল প্রতিবন্ধক হিসেবে টার্গেট হয়ে দাঁড়ান বুদ্ধিজীবী এবং শিক্ষকরা।