তবে তুর্কি নারীদের ওই হাসি কোনো বিজয় কিংবা প্রাপ্তির খবর পেয়ে নয়। বরং রাষ্ট্রের শীর্ষ এক নীতি নির্ধারকের নারী বিরোধী মন্তব্যে সৃষ্ট ক্ষোভ থেকে প্রতিবাদের অভিনব এ কৌশল নিয়েছেন তারা।
‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানায়, গত সোমবার ঈদের দিনের একটি অনুষ্ঠানের তুরস্কের যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও আধুনিক সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলছিলেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী বুলেন্ত আরনিস।
এ সময় তিনি নারীদেরকে জনসম্মুখে শব্দ করে হাসতে বারণ করেন। তার ভাষায় মেয়েদের অত্যধিক হাসাহাসি শালীনতা ও ভদ্রতার পরিপন্থি।
তার ওই বক্তব্য দেশটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনকি মূল ধারার গণমাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় তুলেছে। ধর্মনিরপেক্ষ দেশটির ইসলামপন্থি সরকারের ধর্মপ্রীতিরও সমালোচনা করেন প্রতিবাদীরা।
সাংবিধানিকভাবে তুরস্কে ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা রাখা হয়েছে। তবে ধর্মনিরপেক্ষ দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরকার চালাচ্ছে ইসলামপন্থি দল ‘জাস্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ (একেপি)।
উপ-প্রধানমন্ত্রী আরনিস নিজেও একেপি’র জ্যেষ্ঠ্য নেতা। তবে একেপি দলীয় প্রধানমন্ত্রী রেসেপ তায়েপ এরদোয়ান রাষ্ট্রপরিচালনায় ধর্মকে টেনে আনবেন না বলে বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইনস্টাগ্রাম, ট্যুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাখ লাখ তুর্কি এখন মেয়েদের সহাস্য মুখের ছবি পোস্ট করে যাচ্ছে। দেশটির তিন লাখেরও বেশি ট্যুইটার ব্যবহারকারী এখন নারীদের হাসি বিরোধী মন্তব্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার। #kahkaha (তুর্কি ভাষায় হাসি থামাও বুঝাতে), #direnkahkaha বা হাসিমুখদের থামাও, #direnkadin বা নারীদের দমাও এসব হ্যাসট্যাগ দিয়ে হাসির ছবি বিলানো হচ্ছে।
পাশাপাশি এসব ছবির নিচে উপ-প্রধানমন্ত্রীর আরনিসের নারী বিরোধী মনোভাবের তীর্যক সমালোচনা করছেন তারা।
অনেকে বলছেন, মেয়েদের হাসিতে নাখোশ হওয়ার চেয়ে বরং সরকারের উচিত ধর্ষণ, পারিবারিক সহিংসতা ও বাল্য-বিবাহ নিয়ে কথা বলা।
তুরস্কের জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব তেমেলকুরানই সর্বপ্রথম নিজের ট্যুইটার পেইজে হাস্যোজ্জল ছবি পোস্ট করে আরনিসের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। ১০ লাখেরও বেশি অনুসারি রয়েছে তার ওই পেইজে। তিনি বলেন,“এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও রক্ষণশীল বক্তব্য।”
বিবিসিকে তিনি আরো বলেন, “আমার ট্যুইটার পেইজের টাইমলাইন নারীদের উজ্জল হাসিতে ভরে গেছে। এটা অত্যন্ত চমৎকার, অন্যরকম একটি ব্যাপার।”
ইনস্টাগ্রামেও একই ব্যাপার ঘটে চলছে।
২৩ বছর বয়সী হাজেল নাজ বেসলেইসি নিজের হাস্যোজ্জল ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে লিখেন, “আমি স্বাধীন, হাসব কি হাসব না তাও আমার নিজস্ব ব্যাপার।”তারা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারে না, বিবিসি’কে বলেন তিনি।
তুরস্কের অনেক পুরুষও নারীদের হাসির পক্ষের প্রচারণায় অংশ নেন। খ্যাতনামা টিভি উপস্থাপক ফাতিহ পোরতাকাল ট্যুইটারে লেখেন, “জনসম্মুখে নারীরা যদি হাসতে না পারে, তবে পুরুষরাও যেন জনসম্মুখে কান্নাকাটি না করে।”
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রেসেপ তায়েপ এরদোয়ানও দুই বছর আগে এ ধরনের এক বক্তব্য দিয়ে জনগণের তোপের মুখে পড়েন। গর্ভপাতকে ‘হত্যা’ আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেয়ার পর এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অনেক নারী।
তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক নিজের পাকস্থলির ছবি পোস্ট করা শুরু করে। ‘দেহ আমার, সিদ্ধান্তও আমার’ এমন স্লোগান প্রচার করে তারা।