‘অনেক হয়েছে, আর না’

ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে গাজার রাতের আকাশও এখন দিনের মতো ফারাহ বাকেরের কাছে, ঘরে  থাকলেও প্রতি মুহূর্ত মরণভয়ে কাটছে ফিলিস্তিনি এই কিশোরীর।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2014, 11:59 AM
Updated : 30 July 2014, 04:12 PM

দুই-দুইটি যুদ্ধের বীভৎসতার সাক্ষী ফারাহ, এখন দেখছেন তৃতীয়টি। বদ্ধ ঘরে যে কোনো সময় হানা দিতে পারে মৃত্যু, তা জানেন; সেই সঙ্গে জানেন নিজের অসহায়ত্বও, কেননা গাজায় ইঞ্চি পরিমাণ ভূমিও এখন নিরাপদ নয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঘরবন্দি ডাচ কিশোরী অ্যান ফ্রাঙ্কের ডায়েরির খবর প্রায় সবারই জানা, সেই রকমই গাজার চিত্র লিখছেন ফারাহ। পার্থক্য এই যে তথ্য প্রযুক্তির আধুনিকায়নের এই যুগে তার সঙ্গী টুইটার।

টুইটারে লিখে চলেছেন ১৬ বছরের ফারাহ, তাতে উঠে এসেছে ইসরায়েলের অবিরত গোলাবর্ষণে গাজায় মানবতার মৃত্যুর কথা। ফুটে উঠেছে তার বেঁচে থাকার আর্তি- ‘তিনটি যুদ্ধ থেকে বেঁচে আছি, অনেক হয়েছে, আর না’।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অভিযানের ২৩ দিন পার হল। এতে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের কাছাকাছি,যাদের প্রায় সবাই নিরীহ মানুষ। অন্যদিকে ইসরায়েলের দাবি, ফিলিস্তিন থেকে হামাসের ছোড়া রকেটে তাদের অর্ধশত মারা গেছে।

গত সোমবারও গাজার আল শিফা হাসপাতালের সামনে ইসরায়েলি গোলার আঘাতে মারা পড়েন ১০ জন। ওই হাসপাতালটির ঠিক উল্টো দিকেই ফারাহ’র বাসা, তার বাবা একজন নিওরোসার্জন।

ঘরে থেকেই গোলা হামলার এই ঘটনা দেখেছেন ফারাহ। তাদের বাড়ির শোবার ঘরের জানালার কাচও ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে, যার ছবি নিজের টুইটারে তুলে দিয়েছেন এই কিশোরী।

সেই সঙ্গে লিখেছেন- “এটা আমার এলাকা, আমি কান্না থামাতে পারছি না। হয়ত আজ রাতে আমিও মারা যাব।”

“আমাদের পুরো এলাকাতেই গোলাবর্ষণ চলছে। যুদ্ধের মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ রাত। আমি সবাইকে জানাতে চাই, যে কোনো মুহূর্তে শহীদ হতে পারি আমি নিজেও,” মৃত্যুর কাছাকাছি থেকে আবার লিখেছেন ফারাহ।

ছয় বছর বয়সি একটি বোন আছে ফারাহ’র, প্রতিবার গোলার শব্দে শিশুটির শিউরে ওঠাও উঠে এসেছে তার কিশোরী বোনের টুইটে। বলেছেন, জানালার কাচ ভেঙে পড়েছিল তার ছোট বোনের ওপর, এতে দমবন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তার।

“রকেট নিক্ষেপ দেখলেই কানে আঙুল দেয় আমার ছয় বছর বয়সী বোন, আর চিৎকার করে কাঁদতে থাকে, যাতে শব্দ শুনতে না হয় তাকে।”

গত তিন সপ্তাহ ধরেই ঘরে আটকা ফারাহ। বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না তাদের, কিন্তু তাতেও অন্ধকার হয় না গাজার আকাশ, বলেছেন তিনি। তবে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণের কারণে ছড়ানো এই আলো জীবনদায়ী নয়, বরং প্রাণসংহারী।

“অন্ধকার ঘরে বসে আছি, বিদ্যুৎ নেই; তবে ফ্লেয়ারে আলোকিত আকাশ, মনে হয় যেন রাত নয়, এখন দিন। আর চারদিকে শুধু বোমার কানফাটা শব্দ।”

“এই অবস্থা শুধু আমাদের এলাকায় নয়, পুরো গাজার চিত্র এখন এমনি। আসলে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজব, গাজার কোথাও এমন স্থান নেই।”

ঘরের মধ্যে থেকেই যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখছেন ফারাহ। ৯ বছর বয়সি একটি শিশুর মাথা থেকে বের করে আনা ইসরায়েলি গোলার স্প্লিন্টারের ছবিও টুইটারে তুলেছেন ফারাহ, তার চিকিৎসক বাবার কাছে এটি দেখেছেন তিনি।

গত ২৫ জুলাই ২৪ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হলে মুক্ত বাতাসে বের হওয়ার সুযোগ ঘটে ফারাহ’র, তবে দেখতে হয় ৫ লাখ মানুষের বাস ১৭ বর্গমাইলের গাজা শহরে যুদ্ধের ধ্বংসলীলা।

“বাইরে বেরিয়ে এদিক-সেদিক দুই ঘণ্টা হেঁটেছি, ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত।”

ফিলিস্তিনের মূল ভূখণ্ড পশ্চিমতীর যে পাশে, মাঝে ইসরায়েলকে রেখে তার বিপরীত পাশে গাজা ভূখণ্ড। এর দুই দিকে ইসরায়েল, একটি দিকে ভূমধ্যসাগর এবং অন্য দিকে মিসর। ১৩৯ বর্গমাইলের এই গাজার মোট জনসংখ্যা ১৮ লাখ। আর এই এর প্রধান শহর গাজা সিটি।  

নিজের শহরের অবিশ্বাস্য ধ্বংসচিত্র দেখে বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন রেখেছেন ফারাহ, যেন বন্ধ হয় এই যুদ্ধ।

“আমি বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই, শিশুদের ওপর এই বোমা হামলা কোনো বিচারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

“আমি বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই, গাজায় মানবতার মৃত্যু ঘটছে,” আকুতি এই কিশোরীর।