বোমায় মরল বাবা-মা, চোখ মেলল ‘ঈদ’

ইসরায়েলের বোমায় মরেছে বাবা-মা, এর মধ্যেই চোখ মেলেছে মৃত মায়ের গর্ভ থেকে বের করে আনা শিশু সায়মা শেখ আল-ঈদ। তার এ বেঁচে থাকাকে ‘অলৌকিক’ বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2014, 02:00 PM
Updated : 28 July 2014, 02:00 PM

গাজার খান ইউনিস শহরের একটি হাসপাতালের ‘ইনকিউবেটরে’ রাখা এই ফিলিস্তিনি মেয়েশিশুর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে তিনটি দিন ভালভাবেই পাড়ি দিয়েছে শিশুটি।

বিবিসি অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ইনকিউবেটরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে ঈদ। কম্পিউটারে নির্দেশক সংকেতগুলোও তার বেঁচে থাকার প্রমাণ দিচ্ছে। সে নড়াচড়া করছে। তাকাচ্ছে চোখ মেলে।

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় বাবা-মা হারিয়ে পৃথিবীর আলোয় আসা এ শিশুটির খবর প্রচার হচ্ছে বিশ্বের সুপরিচিত গণমাধ্যমগুলোতে। বার্তা সংস্থা ‘রয়টার্স’, মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ মাধ্যম ‘আল-জাজিরা’, যুক্তরাজ্যের ‘দ্য ডেইলি মেইল’সহ অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে তার ছবি আর বেঁচে থাকার খবর।

মায়ের নামের সঙ্গে মিল রেখে শিশুটির নাম রাখা হয় সায়মা শেখ আল-ঈদ।

গত শুক্রবার ভোরে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর সকালে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে এক গর্ভবতী নারীর লাশ উদ্ধার করে তার দেহে অস্ত্রোপচার চালিয়ে বের করা হয় শিশু ‘ঈদ’কে।

চিকিৎসকরা এখন দুই সপ্তাহের অপরিণত বয়সের এ শিশুটির বেঁচে থাকারই সম্ভাবনা দেখছেন।

তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া খান ইউনিসের একজন ডাক্তার বিবিসি’কে বলেন, “এ ঘটনায় আমি খুবই ক্ষুব্ধ, একই সঙ্গে ব্যথিত। ওই শিশুকে নিজের বলেই মনে করছি আমি।”

শিশু ঈদ চোখ মেললেও ইসরায়েলের চালানো নির্মমতার কারণে আরো অনেক শিশুরই হয়তো পৃথিবীর আলো দেখার সৌভাগ্য হয়নি। শিশু ঈদের নবজীবনের এ সূচনালগ্নে ফিলিস্তিনে শুরু হয়েছে মুসলমানদের ধর্মীয় ঈদ উৎসব।

ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের কবরে আহাজারিতে কেটেছে এমন অনেক ফিলিস্তিনির ঈদ

কিন্তু ইসরায়েলের বর্বর হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা এখন ধ্বংসস্তূপ। বাতাসে লাশের গন্ধ। ট্যাংকের গোলা, বোমার আগুনে জ্বলছে গাজা। বন্দুকের গুলি, শিশুর কান্না আর রক্তের মধ্যেই গাজায় উদযাপিত হচ্ছে নিরানন্দ এক ঈদ।
সোমবার বিমান হামলায় বিধ্বস্ত মসজিদগুলোতে ঈদের নামায আদায় করেন গাজার বাসিন্দারা। সেখান থেকে চলে যান ইসরায়েলি বিমান হামলায় হারানো স্বজনদের নতুন কবরগুলো কাছে। সেখানে প্রার্থনা করতে গিয়ে অনেককে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।
ইসরায়েলের বিমান ও কামান থেকে ছোড়া গোলায় বিধ্বস্ত হয়েছে গাজার রাফা, খান ইউনিস, বেইত লাহিয়া, বেইহ হানুনসহ অন্যান্য সীমান্ত এলাকার অসংখ্য ঘরবাড়ি।
সোমবার ঈদকে কেন্দ্রে করে চলা যুদ্ধবিরতির ফাঁকে আশ্রয় শিবির থেকে নিজেদের বিধ্বস্ত বাসস্থানে যান গাজাবাসী। ধ্বংস্তূপ থেকে জরুরি আসবাবপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করেছেন তারা।
ওদিকে, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে কাজ করছে জাতিসংঘের শীর্ষ পক্ষগুলো। ঈদ উপলক্ষে শুরু হওয়া সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিকে আরো দীর্ঘস্থায়ী করতে আলোচনা করছেন তারা। তবে এ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।
২০ দিনের গাজায় নিহত হওয়া এক হাজার ৩০ জনের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
</div>  </p>