গাজায় আরো ২৪ ঘণ্টা ‘অস্ত্রবিরতি’

জাতিসংঘের অনুরোধে ফিলিস্তিনের হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা ভূখণ্ডে ‘মানবিক অস্ত্রবিরতি’ আরো ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়েছে ইসরায়েল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2014, 03:08 AM
Updated : 27 July 2014, 06:18 AM

অবশ্য হামাস যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে বলেছে, ইসরায়েলি সেনারা গাজা ছেড়ে গেলেই কেবল তারা এই মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবে।

এর আগে শনিবার গাজায় ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি দিয়েছিল ইসরায়েল ও হামাস।

রয়টার্স জানিয়েছে, চলমান সংকটের মুখে শনিবার তেল আবিবে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর কথা জানানো হয়, যা রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

ইসরায়েলি মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকের পর দেয়া এক বিবৃতিতে এক কর্মকর্তা বলেন, “জাতিসংঘের অনুরোধে মানবিক বিরতির মেয়াদ আগামীকাল মধ্যরাত পর্যন্ত অনুমোদন করেছে মন্ত্রীসভা। অস্ত্রবিরতি লংঘনের কোনো ঘটনা ঘটলে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।”

তবে হামাসের সঙ্গে ২০ দিন ধরে চলা সংঘাত অবসানে ব্যাপক কোনো চুক্তি এখনও অনেক দূরের বিষয় বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

বিবিসি জানিয়েছে, এর আগে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত করার জাতিসংঘের উদ্যেগ প্রত্যাখান করে হামাস। শনিবারের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায় দলটির যোদ্ধারা।

হামাস বলেছে, ইসরায়েলি সেনারা গাজা ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত এবং উদবাস্তু লোকজনকে নিজ বাড়িতে ফিরে আসার অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে না।

শনিবারের যুদ্ধবিরতিকে ইসরায়েল আরো হামলার প্রস্তুতি নিতে ব্যবহার করেছে এবং ওই বিরতি চালাকালে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তা লঙ্ঘণের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবী করেছে হামাস।

অপরদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চলাকালেও হামাস যোদ্ধাদের ব্যবহৃত সুড়ুঙ্গের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বিবিসিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, শনিবার রাত ৮টায় যুদ্ধবিরতির সময় শেষ হওয়ার পরপরই গাজা থেকে ইসরায়েলে তিনটি মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করা হয় এবং গোলাগুলো ইশখল আঞ্চলিক কাউন্সিল এলাকায় যেয়ে আঘাত হেনেছে।
এছাড়া ইসরায়েলে তিনটি রকেটও নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে দাবী করেছে আইডিএফ। ওই দিন মধ্যরাতের পর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আরও তিনটি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে বলেও দাবী করেছে আইডিএফ।
হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম বিগ্রেড বলেছে, তারা ইসরায়েলে দুটি দীর্ঘ পাল্লার ও পাঁচটি স্বল্প পাল্লার রকেট নিক্ষেপ করেছে।
শনিবার যুদ্ধবিরতি চলাকালে নিজেদের খাবারের মজুদ বৃদ্ধি ও হতাহত সেনাদের উদ্ধার করে ইসরায়েলি সেনারা।
গাজাবাসীরাও যুদ্ধবিরতির সুযোগে নিহত স্বজনদের লাশ খুঁজে বের করে সেগুলো দাফনের ব্যবস্থা করে। সকাল ৮টায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পরপরই তারা সবাই রাস্তায় বের হয়ে এসে ইসরায়েলি হামলার ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে।
এ সময় ইসরায়েলিদের মতো তারাও নিজেদের খাবারের মজুদ বাড়িয়ে পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য তৈরি হয়।
ইসরায়েলের ২০ দিনের অভিযানে গাজায় এরই মধ্যে নিহত হয়েছে অন্তত এক হাজার ৫০ জন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। হামাসের পাল্টা হামলায়ও ইসরায়েলের ৪২ জন সেনাসদস্য ও তিন জন বেসামরিক নিহত হন।
ইতোমধ্যে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান নাভিপিল্লাই।
গত ৮ জুলাই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। ১০ দিনের মাথায় এর মাত্রা বাড়িয়ে নৌ ও স্থল অভিযানও শুরু করে তারা। ইসরায়েলের হামলার জবাবে হামাসও ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।