গাজায় নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে

গাজায় টানা ১৯ দিনের ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2014, 06:15 PM
Updated : 27 July 2014, 05:18 AM

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির শুরুর আগে অভিযান তীব্রতর করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে।

যুদ্ধবিরতির ফাঁকে গাজায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে শতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতেও এক হামলায় একই পরিবারের ১৮ সদস্য নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে রয়টার্স।

এছাড়া শুক্রবার ভোরে উত্তর গাজা এলাকায় ইসরায়েলের বোমা হামলার ফলে সৃষ্ট বড় ধরনের বিস্ফোরণের ছবি প্রকাশ করে বার্তা সংস্থাটি।

গাজার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, খণ্ডকালীন যুদ্ধবিরতির ফাঁকে বিধ্বস্ত ভবনগুলো থেকে অন্তত ১০০ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ১৯ দিনের সেনা অভিযানে গাজায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

এছাড়া অভিযানে পাঁচ হাজার ৬৭০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে জানায় হাসপাতাল সূত্র।

গত ৮ জুলাই থেকে চলা অভিযানে ইসরায়েলের ৪২ জন নাগরিক নিহত হয়েছে বলে দেশটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। নিহতদের মধ্যে তিনজন বেসামরিক নাগরিক, বাকিরা সবাই সেনাসদস্য।

গাজায় ব্যাপক প্রাণহানিতে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগের মধ্যে শুক্রবার হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির নতুন রূপরেখা দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। মিশরের জাতিসংঘের শীর্ষব্যক্তিসহ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ঠিক করেন তিনি।

তবে প্রস্তাবের অধিকাংশ ক্ষেত্রে হামাসের অনুকূলে গেছে দাবি করে তাৎক্ষণিকভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। অবশ্য পরে উভয় পক্ষ ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি হয়।

শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ওই যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও এ সময়ের মধ্যে গাজায় এলাকায় ইসরায়েলি ড্রোন ও জঙ্গি বিমান উড়তে দেখেছেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।

যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরুর পাশাপাশি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয়টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আলোচনায় বসেছেন। আলোচকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক ও কাতারের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির সময় দীর্ঘায়িত করা এবং বিরোধ মীমাংসা নিয়ে তারা আলোচনা করছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।

এদিকে যুদ্ধবিরতি চললেও এসময়য়ের মধ্যে হামাসের সুড়ঙ্গ অনুসন্ধান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলের সেনারা।

গত ৮ জুলাই হামাসশাসিত গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। প্রথম দিকে বিমান হামলা চালালেও হামাসের সুড়ঙ্গ ধ্বংসের জন্য তা যথেষ্ট নয় দাবি করে গত ১৮ জুলাই স্থল অভিযানে নামে ইসরায়েলি সেনারা।

স্থল অভিযান শুরুর পরেই গাজায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। গাজার সাজাইয়া, খান ইউনিস ও গাজা সিটি এলাকায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার সকাল ৮টায় যুদ্ধবিরতি শুরুর পরই সেচ্ছাসেবকদের নিষেধ উপেক্ষা করে সাজাইয়া এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে সেখানে ফিরতে শুরু করে।

যুদ্ধ বিরতির সুযোগে গাজার অনেক শহরের বাসিন্দারা রাস্তায় বের হয়ে আসেন। জরুরি খাদ্যসামগ্রী কেনাকাটা এবং ব্যাংকে লেনদেনও করেন তারা।

তবে বিভিন্ন ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে থাকা লাশের দুর্গন্ধের কারণে অনেক এলাকায় চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে গণমাধ্যমকর্মীরা জানায়।

গুলির শব্দ থেমে নেই

ঘটনাস্থল থেকে বিবিসির প্রতিবেদক জানান, মানবিক যুদ্ধ বিরতির চলাকালেও তিনি গুলির শব্দ শুনেছেন। আকাশে ইসরায়েলি ড্রোন উড়তে দেখা গেছে। যুদ্ধবিমান উড়ার শব্দও শোনা গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, যুদ্ধবিরতির শুরু কয়েক ঘণ্টা আগে খান ইউনিসে এক অভিযানে পাঁচ শিশুসহ একই পরিবারের ১৮ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।