আবার বিমান দুর্ঘটনা

প্রায় ৩০০ আরোহী নিয়ে ইউক্রেইনে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মালয়েশীয় উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের পর সপ্তাহ না পেরোতেই পরপর দুই দিন দুর্ঘটনায় পড়ল দুটি বিমান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2014, 10:25 AM
Updated : 24 July 2014, 06:53 PM

বৃহস্পতিবার একশ’র বেশি আরোহী নিয়ে আলজেরিয়ার একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আগের দিন তাইওয়ানে ট্রান্স এশিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান জরুরি অবতরণ করতে গিয়ে কয়েকটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়ে ৪৮ জন নিহত হন।

আলজেরিয়ার বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ১১০ জন যাত্রী নিয়ে বুরকিনা ফাসো থেকে আলজিয়ার্সে আসার পথে মালির উত্তরাঞ্চলে থাকা অবস্থায় বিমানটির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর সেটি বিধ্বস্ত হয়।

এয়ার আলজেরির ফ্লাইট এএইচ ৫০১৭ এ আসলে কী ঘটেছে বা এই দুর্ঘটনায় হতাহতের বিষয়ে তেমন সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো মেলেনি। তবে বুরকিনা ফাসোর পরিবহনমন্ত্রী বলেছেন, ওই এলাকায় ঝড়ের কারণে বিমানটির ক্রুদের গতিপথ ঠিক করে নিতে বলা হয়েছিল।

“বিমানটি যে বিধ্বস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেছেন আলজেরিয়ার ওই কর্মকর্তা।

তবে বিমানটি কোথায়, কিভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি ওই কর্মকর্তা।

এরপর মালির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বোবাকার কেইতা বলেছেন, তার দেশের উত্তরাঞ্চলের মরু এলাকায় বিমানটির ধ্বংসাবশেষ মিলেছে।  

আলজেরিয়ার বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানায়, ফ্লাইট এএইচ ৫০১৭ বুরকিনা ফাসোর ওয়াগাডউগু বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরুর ৫০ মিনিটের মাথায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ১০ মিনিটে বিমানটির আলজেরিয়ায় পৌঁছানোর কথা ছিল।

এমডি-৮৩ উড়োজাহাজটির ১১৬ জন আরোহীর মধ্যে ১১০ জন যাত্রী ও ছয় জন ক্রু। স্পেনের বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা সুইফটএয়ার এর কাছ থেকে ভাড়া করা হয়েছিল বিমানটি।

এয়ার আলজেরি জানায়, বিধ্বস্ত বিমানটির যাত্রীদের মধ্যে ফ্রান্সের ৫১ জন নাগরিক ছিলেন। এছাড়া বুরকিনা ফাসোর ২৪ জন, লেবাননের আটজন, আলজেরিয়ার চারজন এবং লুক্সেমবার্গের দুইজনের নাম রয়েছে যাত্রীদের তালিকায়।

এছাড়া বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, ইউক্রেইন ও রুমানিয়ার একজন করে নাগরিক ওই বিমানে ছিলেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এর আগে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যঁরা ফ্যাবিউস বলেছেন, আলজেরিয়ার বিমানটি এখনো নিখোঁজ। তবে সম্ভবত বিধ্বস্ত হয়েছে।

“ব্যাপক তল্লাশির পরেও এখনো বিমানটির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। বিমানটি সম্ভবত বিধ্বস্ত হয়েছে।”

এ ঘটনার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ দেশটির দ্বীপাঞ্চলে তার নির্ধারিত সফর বাতিল করেছেন। বিমানটির খোঁজে সব ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

বিমানটির খোঁজে মালির উত্তরাঞ্চলীয় শহর গাওয়ের আশপাশের বিস্তীর্ণ মরু এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছিল দুটি ফরাসি যুদ্ধবিমান।

‘যতক্ষণ দরকার ততক্ষণ এ তল্লাশি’ চালানোর ঘোষণা দিয়ে ওলাঁদ বলেন, “বিমানটি খুঁজে পেতে সম্ভাব্য সব কিছু করা হবে।”

তার ওই বক্তব্যের পরই মালির প্রেসিডেন্ট ধ্বংসাবশেষ সনাক্তের কথা জানান।  

যে এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে তুয়ারেজ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং এলাকাটিও দুর্গম।

চার মাস আগে, গত ৮ মার্চ মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে মাঝ আকাশে উধাও হয়ে যায়। ব্যাপক আন্তর্জাতিক চেষ্টার পরও বিমানটির কোনো হদিস এখনো পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ গত ১৭ জুলাই মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের আরেকটি বিমানের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিমানটি ইউক্রেইনের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ভূপাতিত করা হলে ২৯৮ জন আরোহীর সবাই নিহত হন।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেইন অভিযোগ করে আসছে, ইউক্রেইনের রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মালয়েশীয় বিমানটিকে ভূপাতিত করে।