যদি মোদি জিতে যান! আতঙ্ক কাশ্মীরীদের

মোহাম্মদ আমিন পন্ডিতকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিন সন্তানের জনক এই ব্যক্তিকে সেনাবাহিনীর পোশাক পরা লোকেরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। কাশ্মীরের গুলজারপুরে গত সপ্তাহে একইভাবে হত্যা করা হয় আরো দুইজনকে।

>>রয়টার্স
Published : 24 April 2014, 04:17 PM
Updated : 24 April 2014, 06:01 PM

ভোটের মৌসুমে এ ধরনের খুনের ঘটনা কাশ্মিরের মুসলিমদের মনে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। তিন গ্রামবাসীকে হত্যার প্রাথমিক অভিযোগ উঠেছে উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে, যারা নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছিল।

লোকসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসা নতুন প্রধানমন্ত্রী ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মিরে কিভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনবেন তাও এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিহত পন্ডিতের ভাই আব্দুল রহিম বলেন, “মানুষ এ নিয়ে এখন আতঙ্কিত।” কাশ্মীরের একটি আঞ্চলিক দলের নেতা হওয়াই তার ভাইয়ের ‘অপরাধ’ বলে দাবি করেন তিনি।

আগামী ১২ মে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হবে। চারদিন পর প্রকাশিত ফলে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদিই এগিয়ে থাকবেন বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

মোদির এগিয়ে থাকা নিয়ে চিন্তত শতকোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতের ১৫ কোটি মুসলিম।

মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সেখানে ছড়িয়ে পড়া দাঙ্গা তিনি দমন করার চেষ্টা করেননি বলেই তাদের অভিযোগ। ওই ঘটনায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল যাদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম।

মোদি এখনো গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি অবশ্য এ ধরনের অভিযোগ বার বারই নাকচ করেছেন।

কাশ্মিরীদের আতঙ্কের আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে- নির্বাচনী ইশতেহারে বিজেপি ভারতের ওই এলাকাটির অখন্ডতা ফিরিয়ে আনা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদটি বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ভারত, পাকিস্তান নাকি স্বাধীনতা?

মোদির এই অভিপ্রায় গুলজারপুরের বাসিন্দাদেরকে এবং যারা ভারত থেকে কাশ্মিরের স্বাধীনতা চান তাদেরকে আরো ভাবিয়ে তুলেছে।

সম্প্রতি পন্ডিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনা তিরিশেক মানুষকে এক জায়গায় গোল হয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। তবে এ নিয়ে তারা অবশ্য ভারতের কোনো মূল ধারার দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে চাননি।

ভারত থেকে নিজ ভূখন্ডের স্বাধীনতা চান কিনা? সমবেতদেরকে এমন প্রশ্ন করা হলে সবাই একযোগে হাত তোলেন।

কাশ্মিরের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ উদামপুরে এক নির্বাচনী জনসভায় বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি কাশ্মিরের দাবিদার পাকিস্তানের প্রতি ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের নমনীয় অবস্থানের কড়া সমালোচনা করে যান।

পাকিস্তানের ইন্ধনে কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বেড়ে চলছে বলে মনে করেন ভারতের নীতিনির্ধারকরা।

ওই অঞ্চলের প্রভাবশালী বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র সিং শ্রীনগরে দলীয় কার্যালয়ে রয়টার্সকে বলেন, “আমরা দুর্বল কোনো মনোভাব নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই না। সন্ত্রাসী হামলা এবং সংলাপ কখনো একসঙ্গে চলতে পারে না।”

ভারতের নতুন সরকার বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ না করলে পাকিস্তান এ নিয়ে খেলা দেখাতেই থাকবে, বলেন তিনি।

গত বছর নির্বাচনের সময় কাশ্মির নিয়ে সংলাপ আবার শুরু করার কথা বেশ জোর দিয়ে বলেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ।

ওই ভূখন্ড নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬৫, ১৯৯৯ সালে বড় ধরনের যুদ্ধ হয়েছে। ২০০৩ সালে অস্ত্রবিরতি চুক্তি হলেও ১৯৯০ এর দশকে কাশ্মিরে ছড়িয়ে পড়া বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতায় ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যাওয়ার পরও সেখানে এখনো এর রেশ রয়ে গেছে।

তবে বর্তমানে কাশ্মিরে পুলিশ ও সেনা বাহিনীর সাত লাখ সদস্য মোতায়েন করে অপেক্ষকৃত শান্ত অবস্থা বজায় রেখেছে সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ ক্ষমতা আইনের ব্যবহার করে বিচারবহির্ভূত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে বলে প্রচার রয়েছে।

‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর কোয়ালিশন অব সিভিল সোসাইটি’র আহ্বায়ক খুররাম পারভেজ বলেন, “এটা হচ্ছে বন্দুকের নলের মুখে চর্চা হওয়া গণতন্ত্র।”