‘বিদেশে সড়ক দুর্ঘটনা মার্কিনিদের মৃত্যুর বড় কারণ’

আমেরিকার ভ্রমণকারীরা বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে রোগব্যাধী বা সংঘাতময় স্থান প্রায় সময়ই সচেতনভাবে এড়িয়ে চলেন। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার মতো বড় ঝুঁকিকে তারা হয়তো খুব একটা আমলে নেয় না। অথচ এই সড়ক দুর্ঘটনাতেই বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি মার্কিনি মারা যান।

>>রয়টার্স
Published : 26 Dec 2013, 06:03 AM
Updated : 26 Dec 2013, 06:03 AM

নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

‘দ্য জার্নাল ইনজুরি প্রিভেনশন’ এ গবেষকরা উল্লেখ করেন, ২০০৩ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে হত্যা ও সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে মারা যাওয়ার চাইতে অনেক বেশি আমেরিকান ভ্রমণকারী গাড়ি বা মটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছেন।

জনস্বাস্থ্যের ওপর যে অর্থ ব্যয় করা হয় তার বেশিরভাগই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত জানিয়ে ডা. ডেভিড বিশাই রয়টার্স হেল্থকে বলেন, “যা আপাতত দৃষ্টিতে সফলভাবে ব্যয় করা হয়েছে।“

“কিন্তু এখন তহবিলের ক্ষেত্রে ফাঁক সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশে ভ্রমণকারীরা কিসের শিকার বেশি হয়, সেটা সংক্রামক ব্যাধি বা হত্যা নয়- এটা সড়কের নিরাপত্তা।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি পরিমাপ করা বেশ কঠিন। বিদেশে ও দেশে নিজেদের নাগরিকদের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র অধিদপ্তর বছরে ৫১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে।

অতীতে গবেষকদের এটা বের করতে বেশ লড়াই করতে হয়েছে যে, বিদেশে নিরপেক্ষ প্রেক্ষাপটে ঠিক কতজন আমেরিকান মৃত্যু বরণ করেছেন। কারণ একটি দেশে যে কয়জন আমেরিকান মারা গেছেন তার মাধ্যমে বোঝা যায় না ভ্রমণকারীরা ঠিক কতোবার ওই এলাকাটি ভ্রমণ করেছেন।

বিষয়টি মাথায় রেখে বিশাই ও তার দল একটি দেশে প্রতি এক মিলিয়ন আমেরিকান ভ্রমণকারীর মধ্যে কতজন মারা যান সেটা ধরে হিসাব করেছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ২০০৩ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে বছরে গড়ে ৫৪১৭ জন আমেরিকান ভ্রমণকারী বিদেশে মারা গেছেন।

আগের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে একজন আমেরিকান সাধারণত গড়ে ২০ রাত বিদেশে অবস্থান করে।

বিশাই এর গবেষনায় বেরিয়ে এসেছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটে ফিলিপাইনে। সেখানে প্রতি মিলিয়ন ভ্রমণকারীর মধ্যে ২১ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

ওই দেশে ২০০৭ সালে সাত জন আমেরিকান এর ২০০৮ সালে ১১ জন আমেরিকান ভ্রমণকারী খুন হন।

ফিলিপাইন ছাড়া অন্য যে চারটি দেশে আমেরিকান ভ্রমণকারীরা বেশি মারা যান সেগুলো হলো- কলাম্বিয়া; যেখানে প্রতি মিলিয়ন আমেরিকান ভ্রমণকারীর মধ্যে ১৩.৭ জন, দ্য ডমিনিকান রিপাবলিকে ১১ জন এবং থাইল্যান্ড ও মরক্কোতে ৫.৫ জন করে ভ্রমণকারী মারা যায়।

মোট ১৬০টি দেশ থেকে গবেষকরা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, একমাত্র ফিলিপাইন ছাড়া অন্য সব দেশেই খুন হওয়ার চাইতে সড়ক দুর্ঘটনায় বেশি আমেরিকান মারা গেছেন।

যেসব দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বেশি মারা যায় তার শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। থাইল্যান্ডে প্রতি মিলিয়নে ১৫টি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে এবং ১৬.৫ জন মারা যায়। বেশির ভাগ দুর্ঘটনার সঙ্গে মটরসাইকেল ও স্কুটার জড়িত থাকে।

বিশাই বলেন, “মানুষ ভিয়েতনামে গিয়ে মটরসাইকেলে বেশি চড়ে। কারণ এটায় চড়ে সব জায়গায় যাওয়া যায়।”

অন্য যেসব দেশে ভয়াবহ দুর্ঘটনা বেশি হয় যেগুলো হলো- মরক্কো; প্রতি মিলিয়নে ১২ জন, দক্ষিণ আফ্রিকা ১১ জন এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১০ জন মারা যায়।

থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম ভ্রমণকারীদের পরামর্শ দিতে গিয়ে বিশাই বলেন, “আপনারা যখন সেখানে ভ্রমণে যাবেন তখন মোটরসাইকেল ও স্কুটারে না উঠে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারবেন।”

তিনি ট্যাক্সিতে ওঠার ক্ষেত্রেও ভ্রমণকারীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন।