সিঙ্গাপুরে বিরল দাঙ্গা, গ্রেপ্তার ২৭

সিঙ্গাপুরে বাসের ধাক্কায় এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চারশ’র বেশি মানুষ রাস্তায় জড়ো হয়ে যানবাহনে আগুন দেয় এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

>>রয়টার্স
Published : 9 Dec 2013, 09:24 AM
Updated : 9 Dec 2013, 09:24 AM

রোববার রাতের দিকে সিঙ্গাপুরে ভারতীয় অধ্যুষিত এলাকা লিটল ইন্ডিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। শহরটিতে ৪০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটাই প্রথম বড় ধরনের কোনো দাঙ্গার ঘটনা।

পুলিশ জানায়, ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি বাস ৩৩ বছর বয়সী ভারতীয় এক নাগরিককে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

পরে দাঙ্গায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ২৭ জনকে আটক করে। আটকদের অধিকাংশই দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিক।

পুলিশ আশা করছে আগামী কয়েক দিনে তারা এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরো অনেককে আটক করতে সক্ষম হবে।

লিটল ইন্ডিয়া এলাকায় সাধারণত রোববার খুব ভিড় থাকে। বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আসা শ্রমিক বিশেষ করে নির্মাণ শ্রমিকরা তাদের সাপ্তাহিক ছুটি কাটানোর জন্য ওই এলাকায় জড়ো হয়।

অনলাইনে পোস্ট করা বিভিন্ন ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, একদল ক্ষুব্ধ লোক বাসটির সামনের কাঁচে ভাংচুর চালাচ্ছে। যদিও ওই সময়ও দুর্ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিটি বাসের নিচে আটকা পড়ে ছিল।

দ্য সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স এক বিবৃতিতে জানায়, একটি বাস দুর্ঘটনার পর ওই সংঘর্ষ শুরু হয়।

দুর্ঘটনার পরপরই প্রায় চারশ’ জনের একটি দল রাস্তায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। সংঘর্ষে প্রায় ১০ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

ওই সময় একটি অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশের তিনটি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল পোড়ানো হয় বলে জানিয়েছে দ্য সিভিল ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ)।

দাঙ্গা দমনে দুর্ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের রাস্তায় প্রায় তিনশ’ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের বিষয়ে প্রথম ফোন পাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই তারা পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

এদিকে এই দাঙ্গায় সিঙ্গাপুরের কোনো নাগরিক জড়িত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্সের কমিশনার এনজি জো হি।

“এখন পর্যন্ত আমরা যতদূর জানি এরসঙ্গে সিঙ্গাপুরের কোনো নাগরিক জড়িত ছিলেন না। সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা এরকম অনাকাঙ্খিত ভাবে সংঘর্ষ, দাঙ্গা, সম্পদ নষ্ট করা ও পুলিশের সঙ্গে লড়াই করেন না।“

১৯৬৯ সালের পর সিঙ্গাপুরে আর এ ধরণের দাঙ্গা হয়নি। সেবার চাইনিজ ও মালাই জনগণ ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলো।

দাঙ্গার বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরের আইন অত্যন্ত কঠোর। সেখানে দাঙ্গায় জড়িতদের সাত বছরের বেশি কারাদণ্ড দেয়া হয়। সেই সঙ্গে বেত্রাঘাত করার সম্ভাবনাও থাকে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লং তার ফেসবুকে একাউন্টে রোববারের দাঙ্গাকে ‘খুবই মারাত্মক ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন।

তিনি লেখেন, “যে কারণেই দাঙ্গা শুরু হোক না কেন, এ ধরনের নৃশংসতা, ধ্বংসযজ্ঞ ও অপরাধী আচরণের ক্ষেত্রে কোনো অজুহাতই গ্রহণযোগ্য নয়। অপরাধীদের চিহ্নিত করতে আমরা সব ধরনের চেষ্টা করবো এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।“

কম বেতন পাওয়া বিদেশি শ্রমিকদের অসন্তোষ এই দাঙ্গাকে আরো উসকে দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বছর সিঙ্গাপুরকে শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সেবার চীনা বংশোদ্ভূত প্রায় ১৭০ জন বাস চালক অবৈধভাবে ধর্মঘটে চলে গিয়েছিল এবং ওই ধর্মঘট প্রায় বছর জুড়ে চলেছিল।