অফুরন্ত শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনার খোঁজ

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা নিয়ন্ত্রিত নিউক্লিয়ার ফিউশন গবেষণায় এক যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছেন। এই সাফল্যের পথ ধরে অল্প খরচে অফুরন্ত শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2013, 05:37 AM
Updated : 8 Oct 2013, 05:37 AM

সূর্যে যে প্রক্রিয়ায় শক্তি তৈরি হয় সেই একই প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া হল হার্নেসিং ফিউশন। এই হার্নেসিং ফিউশন তৈরির পথে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতাটি অতিক্রম করেছেন ওই বিজ্ঞানীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লিভারমোরে অবস্থিত লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির ন্যাশনাল ইগনিশন ফ্যাসিলিটির (এনআইএফ) বিজ্ঞানীরা এ অসাধ্য সাধন করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি অনলাইন।

তবে এই গবেষণায় তারা যে পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করতে পেরেছেন ফিউশন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে এর চেয়ে অনেক বেশি শক্তি উৎপাদন করতে হবে। সে পথ কঠিন হলেও তা পারি দিতে পারবেন বলে আশা করছেন এনআইএফ এর গবেষক বিজ্ঞানীরা।

নিউক্লিয়ার ফিউশনে দুটি ভারী হাইড্রোজেন (ডিউটেরন) নিউক্লিয়াস ফিউশন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে একটি হিলিয়াম পরমাণু, একটি মুক্ত নিউট্রন ও প্রচুর শক্তি উৎপাদন করে। সূর্যে এই প্রক্রিয়ায়ই শক্তি তৈরি হয়।

এনআইএফ’র বিজ্ঞানীরা নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ার জন্য অল্প পরিমাণ হাইড্রোজেন চাপে সংকুচিত করে তার ওপর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১৯২ বিমের লেসার দিয়ে তাপ দেন। এতে ফিউশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে পরিমাণ শক্তি বের হয়ে এসেছে তা এর জ্বালানীর শক্তিকে বহুগুণে অতিক্রম করে গেছে।

এই প্রথমবারের মতো বিশ্বের কোনো গবেষণাগারে এ ধরনের সাফল্য অর্জন করা গেল। এতে নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে অল্প জ্বালানী ব্যবহার করে প্রচুর শক্তি উৎপাদনের পথে একটি বড় ধরনের অগ্রগতি হল।

গত অর্ধশতাব্দী ধরে বিজ্ঞানীরা নিয়ন্ত্রিত নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের জন্য কঠিন প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে করা এনআইএফ’র এই গবেষণার সাফল্যই প্রথমবারের মতো তাদের হতাশা দূর করে আশার আলো দেখিয়েছে।

বর্তমানে প্রচলিত নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন ফিশন প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এ প্রক্রিয়ায় একটি ভারী পদার্থের (যেমন ইউরেনিয়াম) নিউক্লিয়াসকে (কেন্দ্রিন) ভেঙে শক্তি উৎপাদন করা হয়। কিন্তু ফিউশন প্রক্রিয়ার হালকা দুটি পদার্থের (যেমন হাইড্রোজেন) কেন্দ্রিনকে যুক্ত করে শক্তি উৎপাদন করা হয়।

বিশ্বে ইউরেনিয়ামের পরিমাণ সীমিত, এটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ। এর উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যয়বহুল। বিপরীতে হাইড্রোজেনে প্রায় অফুরন্ত, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যয় তুলনামূলক অনেক কম।

তাই নিয়ন্ত্রিত ফিউশন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা গেলে বিশ্বে শক্তি উৎপাদনের সংকট উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।