ভূমিকম্পে জেগে উঠল নতুন দ্বীপ

৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষের জন্য অপেক্ষা করছিল আরো একটি বিস্ময়। ভূমিকম্পের ধাক্কা কাটতে না কাটতেই আরো একবার ধাক্কা খেলেন তারা; দেখলেন- ভূমিকম্পের পর আরব সাগরে জেগে উঠেছে এক নতুন দ্বীপ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2013, 03:37 AM
Updated : 26 Sept 2013, 04:26 AM

গত মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের উপকূলীয় শহর গোয়াদরে।

বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের আধ ঘণ্টার মধ্যে শহরের বাসিন্দারা তীর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে নতুন ওই দ্বীপের অস্তিত্ব আবিস্কার করেন।

স্থানীয় সাংবাদিক বাহরাম বালুচ খবরটি পান এক বন্ধুর পাঠানো মোবাইল এসএমএসে। তাতে লেখা- “আমার বাড়ির বাইরে একটি পাহাড় দেখা যাচ্ছে।”

বালুচ বলেন, “বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমি তো হতভম্ব। দূরে দেখা যাচ্ছে ধুসর মিনারের মতো উঁচু এক স্তূপ। যেন বিশাল এক তিমি কিনারে এসে সাঁতার কাটছে। শত শত মানুষ অবিশ্বাস নিয়ে ওই দ্বীপের দিকে তাকিয়ে আছে।”

বুধবার সকালে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ওই দ্বীপের ছবি তুলতে সেখানে যান বালুচ।

“দ্বীপটি অনেকটা ডিম্বাকৃতির, আড়াইশ থেকে তিনশ ফুট দীর্ঘ। পানি থেকে উচ্চতা ৬০ থেকে ৭০ ফুট।”

দ্বীপের বেশিরভাগটাই কাদামাটি, সঙ্গে আছে উচুঁনিচু পাথর। বালুচ ও তার বন্ধুরা দ্বীপের যে অংশে নেমেছিলেন- সেই পাশটিও ছিল কঠিন পাথরের।

“দ্বীপের মধ্যে অনেক মরা মাছ দেখেছি। একপাশে মাটির নিচ থেকে হিস হিস শব্দে গ্যাস বের হচ্ছিল।”

গোয়াদরের প্রবীণরা জানান, ৬০ থেকে ৭০ বছর আগে এ ধরনের আরেকটি দ্বীপ জেগে উঠেছিল সাগরে। ওই দ্বীপটির নাম তারা রেখেছিলেন ‘জ্বালজ্বালা কোহ’ বা ভূমিকম্প পাহাড়। পরে ঢেউয়ে ঢেউয়ে সাগরেই বিলীন হয়ে যায় সেই দ্বীপ।

মঙ্গলাবারের ভূমিকম্প জ্বালজ্বালা কোহ’কেই আবার ফিরিয়ে দিয়েছে বলে বলাবলি করছিলেন তারা।

অবশ্য ভূতাত্ত্বিকরা বলছেন, মহাদেশীয় ভূখণ্ডগুলোর গতির (কন্টিনেন্টাল ড্রিফট) ফলাফল হলো এই দ্বীপ।

বেলুচিস্তানের এই মাকরান উপকূল ভারত-ইউরেশিয়া ভূ-চুত্যির (ফল্ট লাইন) মধ্যে পড়েছে। কয়েক কোটি বছর আগে ভারতীয় ভূখণ্ড সরতে সরতে এসে ইউরেশিয়া (এশিয়া ও ইউরোপ) ভূখণ্ডকে ধাক্কা দিলে এই চ্যুতি তৈরি হয়। এটি দুটি ভূখণ্ডের মিলনস্থল।

মাকরান উপকূলের সাগরতলের ভূভাগে মিথেন সমৃদ্ধ গ্যাসের বিশাল মজুদ রয়েছে বলে জানান পাকিস্তানের ‘ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফি’র মহাপরিচালক রাশিদ তাব্রেজ।

তিনি বলেন, “ভূ-চ্যুতি বরাবর ভূখণ্ডগুলো যখন নড়াচড়া করে, তখন তাপ উৎপন্ন হয়ে গ্যাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তাপে প্রসারিত গ্যাসের চাপে বিস্ফোরণ ঘটে এবং সমুদ্রতল পানির উপরে উঠে এভাবে দ্বীপ সৃষ্টি করে।”

মঙ্গলবার জেগে ওঠা দ্বীপটি ১৯৪৫ সালের পর থেকে ওই উপকূলে সৃষ্ট চতুর্থ এবং গত ১৫ বছরের মধ্যে তৃতীয় দ্বীপ বলে জানান তিনি।

সময়ে গ্যাসের চাপ কমে গেলে দ্বীপটি আবার তলিয়ে যেতে পারে। আবার সাগরের ঢেউয়ের ধাক্কাতেও এর বিলীন হয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে বলেও জানান রশিদ।