‘স্বেচ্ছামৃত্যুতে’ সমর্থন হকিংয়ের

এই আশ্চর্য সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কেউই চলে যেতে চায় না। কিন্তু কখনো কখনো কারো কারো জীবনে এমন সময় বা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন বেঁচে থাকাটাই অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। সেই অভিশাপ থেকে তখন পরিত্রাণ পেতে চান কেউ কেউ। অর্থাৎ মৃত্যু। সেটা আত্মহত্যাই বটে। আর এ ধরনের আত্মহত্যায় সহায়তার প্রতিই সমর্থন জানিয়েছেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং।

>>রয়টার্স
Published : 18 Sept 2013, 04:47 AM
Updated : 18 Sept 2013, 07:50 AM

মাত্র ২১ বছর বয়সে দূরারোগ্য মটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হন হকিং। তাকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, বড়জোর আর ২ থেকে ৩ বছর বাঁচতে পারেন।

কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণীকে ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি দিব্যি বেঁচে রইলেন। বর্তমানে তিনি ৭১ বছর বয়স অতিক্রম করছেন। অবশ্য দীর্ঘসময় ধরেই হুইলচেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না তিনি।

বিশ্বের জীবিতদের মধ্যে অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী হকিং মূলত তার ‘কৃষ্ণ গহ্বর’ (ব্ল্যাক হোল) তত্ত্ব এবং আন্তর্জাতিকভাবে সর্বাধিক বিক্রিত গ্রন্থ ‘কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ (অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম) এর জন্যই সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পান।

চলতি সপ্তায় তার কর্ম ও জীবনভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র মুক্তি উপলক্ষ্যে দেয়া বক্তব্যে হকিং বলেন, তিনি ব্যক্তির নিজের ইচ্ছায় মৃত্যুর অধিকারকে সমর্থন করেন। তবে তা শুধুমাত্র এমন পরিস্থিতিতেই যখন ওই ব্যক্তির মৃত্যু ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

‘হকিং’ শিরোনামে প্রামাণ্যচিত্রটি ২০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।

বক্তব্য দেয়ার সময় হকিং স্মৃতিচারণ করে বলেন, একবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গেলে তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। এক সময় তার স্ত্রীকে বলা হয়েছিল, তিনি চাইলে লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু তার স্ত্রী সেটি করেননি কারণ সেটি তিনি চাননি।

হকিং বলেন, ‘আমি মনে করি যারা আরোগ্যের অতীত কোনো রোগে আক্রান্ত এবং জীবনধারণ তাদের জন্যে অসহনীয় হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে তাদের জীবন অবসানের সুযোগ দেয়া উচিৎ এবং যে বা যারা ওই রোগীর মৃত্যুতে সহায়তা করবেন তারা আইনের ঊর্ধ্বে থাকবেন।”

‘তবে এ ব্যাপারে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, ওই রোগী সত্যিকার অর্থেই তার জীবনের অবসান চান, এ ব্যাপারে তাকে কোনো চাপ সৃষ্টি করা হয়নি বা তাকে বাধ্য করা হচ্ছে না এবং তার অজ্ঞাতে বা অসম্মতিতে কিছু ঘটছে না, যেমনটি আমার ক্ষেত্রে ঘটেছিল।’

যুক্তরাজ্যে আত্মহত্যায় সহযোগিতা বেআইনি। আরোগ্যের অতীত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তার ইচ্ছাতে জীবন অবসানে সহযোগিতা করা যুক্তরাজ্যে অপরাধ হিসাবে গণ্য। এ বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশে বিতর্ক রয়েছে।

আত্মহত্যার অধিকারের পক্ষাবলম্বনকারীরা বলছে, মানুষ নিজে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম আর তাই তার মৃত্যুর সিদ্ধান্তটি সম্মানের সঙ্গে অনুমোদন করা উচিৎ।
কিন্তু এর বিরোধীরা বলছেন, এ বিষয়ে আইন সহজতর করা হলে সাধারণ মানুষ ঝুঁকিতে পড়বে।

সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিশেষ পরিস্থিতি বা ক্ষেত্রে যন্ত্রণাহীন মৃত্যু কিংবা আত্মহত্যায় সহযোগিতা বৈধ।