ইরাকি কুর্দিদের অনাহারে রাখার হুমকি তুরস্কের

ইরাকের উত্তরাঞ্চলে কুর্দিস্তানের স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোট পরিহার না করলে ইরাকি কুর্দিদের অনাহারের মুখে পড়তে হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2017, 02:28 PM
Updated : 26 Sept 2017, 02:49 PM

সোমবার উত্তর ইরাকে ওই গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর কুর্দিদের জন্য এ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথাই ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাগদাদের চাপ, তুরস্ক ও ইরানের হুমকি এবং আন্তর্জাতিক সতর্কতা উপেক্ষা করেই ইরাকি কুর্দিরা কুর্দিস্তান নামে একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন নিয়ে সোমবার গণভোটে নিজেদের রায় দিয়েছে।

বিবিসি জানায়, সব আন্তর্জাতিক সতর্কতা উপেক্ষা করে গণভোট করায় এরদোয়ান কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকার প্রধানকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেছেন।

তিনি বলেন, “সব ধরনের সামরিক ও অর্থনৈতিক বিকল্প নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।”

কুর্দি নেতা মাসুদ বারজানির ‘এখন এ অভিযান পরিহার করা উচিত’ বলে মন্তব্য করেন এরদোয়ান।

এর আগে এরদোয়ান উত্তর ইরাক থেকে বাইরের বিশ্বে পাঠানো কুর্দিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ তেল পাইপলাইন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, “এরপর দেখা যাবে উত্তর ইরাকের আঞ্চলিক সরকার কোন পথ দিয়ে তেল পাঠায়, আর কোথায় তা বিক্রি করে।”

তুরস্ক থেকে কুর্দি সীমান্ত অভিমুখে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

এরদোয়ানের আশঙ্কা,  উত্তর ইরাকের এ গণভোট তুরস্কের ভূখণ্ডে থাকা কুর্দিদেরও ‘বিচ্ছিন্নতার’ পথে ধাবিত করতে পারে। তুর্কি সেনাবাহিনীকে দেশের ভেতরে কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়তেও হচ্ছে।

ইরাকি কুর্দিদের সোমবারের গণভোটে মোট ৫২ লাখ ভোটারের মধ্যে ৭৮ শতাংশই তাদের রায় জানিয়েছেন বলে খবর কুর্দিশ রুদাউ টেলিভিশনের।

ভোট গণনা শুরুর কথা জানিয়েছে রয়টার্স। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফল ঘোষণার আশা করা হচ্ছে; ‘হ্যাঁ’ জয়লাভ করবে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।

ভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়লাভ করলেও এটি সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করা নয় বলে জানিয়েছেন কুর্দি নেতারা। বরং এর মধ্য দিয়ে তারা বাগদাদের কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরুর ম্যান্ডেট পাবেন বলে জানিয়েছেন।

যদিও ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি এ বিষয়ে কোনও ধরনের আলোচনায় বসার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন।

সোমবার রাতে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমরা গণভোটের ফল নিয়ে কোনও আলোচনায় বসতে প্রস্তুত নই, কারণ পুরো গণভোট প্রক্রিয়াই অসাংবিধানিক।”

মধ্যপ্রাচ্যে চতুর্থ বৃহৎ জনগোষ্ঠী হল কুর্দি। কিন্তু তাদের স্থায়ী কোনও রাষ্ট্র কখনওই ছিল না।

ইরাকে মোট জনগোষ্ঠীর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কুর্দি। ১৯৯১ সালে স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার আগ পর্যন্ত কয়েক দশক ধরে তাদের দমন-নিপীড়ন করা হয়।

কুর্দিরা বলছে, ইরাক ছাড়াও ইরান, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৩ কোটি কুর্দিকে নিয়ে তারা নতুন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

২০১৪ সালের পর ইরাকের এক তৃতীয়াংশের দখলে থাকা ইসলামি স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বীকৃতিও এই ভোট।