‘কাচের দেয়াল’ ভেঙে খেলার মাঠে সৌদি নারীরা

জাতীয় দিবসে প্রথমবারের মতো খেলার মাঠে ঢুকলেন কয়েকশ সৌদি নারী, রক্ষণশীলতার দেয়াল টপকে উপভোগ করলেন কনসার্ট, লোক নৃত্য ও আতশবাজির ঝলকানি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2017, 10:13 AM
Updated : 24 Sept 2017, 11:06 AM

শনিবার সৌদি আরবের কিং ফাহাদ স্টেডিয়াম ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী থাকলো বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এনডিটিভি।

এর আগে স্টেডিয়ামটিতে হওয়া খেলা এবং সব অনুষ্ঠানে নারীদের প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতদিন যে খেলার মাঠে কেবল পুরুষরাই যেতে পারতো সেই মাঠে প্রথমবারের মতো পরিবার পরিজন নিয়ে ঢুকে সাংস্কৃতিক আয়োজন ও নাটক উপভোগ করেছেন সৌদি নারীরা।

দেশটির ‘অভিভাবক ব্যবস্থা’ অনুযায়ী, পরিবারের পুরুষ সদস্য যেমন বাবা, ভাই কিংবা স্বামীর অনুমতি ছাড়া নারীরা পড়াশোনা, ভ্রমণ কিংবা অন্য কোনো কার্যক্রম করতে পারে না। আগে খেলার মাঠেও তাদের ঢোকা ছিল ‘বারণ’।

ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রস্তাব করা অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নে সৌদি রাজতন্ত্র তাদের আগের করা কঠোর আইনগুলো শিথিলের চেষ্টা করছে; এরই অংশ হিসেবে খেলার মাঠে নারীদের এই প্রবেশাধিকার।

“আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে মাঠে ঢুকতে আমাদের কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হবে না,” বলেন উৎফুল্ল উম আবদুলরহমান; প্রথমবারের মত মাঠে বসে অনুষ্ঠান দেখতে উত্তরপশ্চিমের জেলা তাবুক থেকে এসেছেন তিনি।

পুরুষদের সমান সুযোগ থাকবে নারীদের- এমন প্রত্যাশা বহুবছর ধরে লালন করে আসার কথাও জানান তিনি।

রয়টার্স বলছে, খেলার মাঠে ঢোকা নারীদের মধ্যে দেখা গেছে বাঁধভাঙা উল্লাস, অনেকের হাতে ছিল সৌদি আরবের পতাকা, কেউ কেউ বোরকার সঙ্গে জড়িয়েছেন রঙিন পরচুলা। অনুষ্ঠানের উদ্দামতার সঙ্গে পুরো মাঠজুড়ে ছিল নারীদের আনন্দ চিৎকার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেক সৌদি পুরুষ ‘ঐতিহাসিক’ এই মুহুর্তকে স্বাগত জানিয়েছেন; গেয়েছেন প্রশস্তি।

“মনে হচ্ছে নারীরাই সব টিকেট কিনে নিয়েছেন,” টুইটারে এক সৌদি পুরুষের সরস মন্তব্য।

কট্টর-রক্ষণশীল সৌদি আরবেই নারীদের জন্য সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ; এটাই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে নারীরা গাড়ি চালাতে পারেননা। তবে সৌদি সরকার সামাজিক সংস্কারের যে কর্মসূচি নিয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে সরকারি চাকরিতে নারীদের উপস্থিতি বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বান্ধবীদের নিয়ে মাঠে আসা সুলতানারও তেমনটাই প্রত্যাশা।

“প্রথমবারের মতো স্টেডিয়ামে এসেছি, মনে হচ্ছে যেন আমি সৌদি নাগরিকের চেয়েও বেশি কিছু; এখন আমি আমার দেশের যে কোনোখানে যেতে পারি।”

দুই গালে জাতীয় পতাকার সবুজ ও সাদা এঁকে সরব চিৎকারে সুলতানার মতো কয়েকশ নারী জানান দিচ্ছেন ‘কাঁচের দেয়াল’ ভাঙার অনুভূতি। স্বপ্ন তাদের আরও বড়।

“আল্লাহ চাইলে কালকেই হয়তো নারীরা গাড়ি চালাতে কিংবা ভ্রমণের মতো আরও বড়, আরও ভালো কিছুর অনুমতি পাবে,” আশাবাদ সুলতানার।