মেক্সিকোতে ভূমিকম্পে নিহত ২৩৭

মেক্সিকোর মধ্যাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, ধসে পড়েছে রাজধানী মেক্সিকো সিটির কয়েক ডজন দালান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2017, 10:57 AM
Updated : 21 Sept 2017, 03:29 PM

মঙ্গলবার দুপুরে ৭ দশমিক ১ মাত্রার এই ভূমিকম্পে মেক্সিকো সিটিসহ এর আশেপাশের কয়েকটি রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

মেক্সিকো সিটিতে অন্তত ৪৪টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে গ্যাস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; কয়েকটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডও হয়েছে।

কোয়াপা এলাকায় ধসে পড়া স্কুলে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে নিহত ২২ শিশুসহ মোট ২৪ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তুপে আটকে থাকা আরও প্রায় ৩০ শিশুর মধ্য থেকে জীবিত উদ্ধারকরা গেছে ১১টি শিশুকে।

একই ধরনের আরও উদ্ধার অভিযানে দেশজুড়ে বিভিন্ন ভবন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জীবিত আরও ৫০ জনকে। টেলিভিশনে এক ভাষণে একথা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতো।

ভূমিকম্পে আরও অন্তত ২০৯ টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ টিতে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মেক্সিকো সিটিতেই নিহত হয়েছে ১০২ জন। আর আশেপাশের রাজ্যগুলোতে নিহত হয়েছে ১৩৫ জন।

ভয়াবহ এ দুর্যোগের শিকার হওয়া মানুষদের জন্য দেশে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মেক্সিকো সিটি থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে পুয়েবলা রাজ্যের আতেনসিঙ্গো এলাকায়। কেন্দ্র ছিল ভূ-পৃষ্ঠের ৫১ কিলোমিটার গভীরে।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বেলা ১টার পরপর এই ভূমিকম্পে সব কিছু কাঁপতে শুরু করলে মানুষ আতঙ্কে রাস্তার বেরিয়ে আসে। ড্যানিয়েল লিবারসন নামের এক পর্যটক জানান, ভূমিকম্পের সময় তিনি ছিলেন একটি হোটেলের ২৬ তলায়। পুরো ভবন তখন এপাশ-ওপাশ দুলছিল। ভেঙে পড়ছিল জানালর কাচ।

টেলিভিশনে আসা ছবিতে দেখা যায়, রাজধানীতে একটি বহুতল ভবনের মাঝের একটি ফ্লোর ধসে গেছে, সেখানে ছুটে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি সরকারি ভবনের এক পাশ রাস্তায় পড়ছে এবং পথচারীরা চিৎকার করছেন।

মেক্সিকো সিটির দক্ষিণ দিকের শহর কুয়েরনাভাকায় ধসে পড়া ভবনের নিচে অনেকে চাপা পড়েছেন বলে স্থানীয় বেতারে জানানো হয়।

উদ্ধারকারী দল এখনও ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে কাজে নেমেছে সাধারণ মানুষও। কারণ, সময় যত পেরিয়ে যাচ্ছে ততই ক্ষীণ হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের নীচে প্রাণের আশা।

ভূমিকম্পের পর থেকেই ধসে পড়া স্কুলটির বাইরে ভিড় করে আছেন বাবা-মায়রা। তাদের অনেকেই বলছেন, ছেলেমেয়ের ফোন থেকে মেসেজ পেয়েছেন। তারা বেঁচে আছে। কিন্তু এ ধ্বংসস্তূপ থেকে কী ভাবেখুঁজে বের করা হবে তাদের সেটি নিয়েই এখন উদ্বেগ।

কাকতলীয় ভাবে মঙ্গলবারের এই ভূমিকম্প ঘটে মেক্সিকোর সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ৩২ বছর পূর্তির দিনেই।

১৯৮৫ সালের এ দিনেই আরেকটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল মেক্সিকোতে। সেই দিবসটি স্মরণে ভূমিকম্পের মহড়া চলার সময়টিতেই আবার ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে মেক্সিকো। তার পর বারবার কাঁপতে থাকে রাজধানীসহ আশেপাশের বিশাল এলাকা।

উত্তর আমেরিকার ভূমিকম্পপ্রবণ এই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চলতি মাসের শুরুতেই আরেকটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়। ৮ দশমিক ১ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে নিহত হয় অন্তত ৯০ জন।