ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে ‘পর্যালোচনায়’ যুক্তরাষ্ট্র

দুই বছর আগে ইরান ও ছয় বিশ্বশক্তির মধ্যে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তিতে নিরাপত্তা স্বার্থের বিষয়টি ঠিকমতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার পরই চুক্তিতে থাকা না থাকার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2017, 07:22 AM
Updated : 21 Sept 2017, 07:22 AM

বুধবার ইরান পরমাণু চুক্তি নিয়ে ওয়াশিংটন এই মনোভাবের কথা জানিয়েছে বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করার বিনিময়ে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তে ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তি ইরানের সঙ্গে চুক্তিটি করে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে তার দেশের জন্য ‘বিব্রতকর চুক্তি’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে আসছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, ওয়াশিংটন চুক্তি থেকে সরে গেলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা বেড়ে যাবে, শুরু হবে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা।

ইরান বলছে, তারা চুক্তি ভঙ্গকারী প্রথম দেশ হবে না। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাবে না বলেও প্রত্যাশা তাদের।

“বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তৃতা ও প্রচার সত্ত্বেও ট্রাম্প চুক্তি থেকে সরে যাবেন বলে মনে হয় না,” জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।

চুক্তি নিয়ে পুনরায় আলোচনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেন তিনি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে ছয়জাতির দেশগুলোর এক দীর্ঘ বৈঠকেও চুক্তির ভবিষ্যৎ স্পষ্ট হয়নি।

যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তেহরানের ওই বৈঠকেই প্রথম একত্রিত হন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও ইরানের মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটাই প্রথম সাক্ষাৎ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশ নীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মেগারিনি জানান, এখন পর্যন্ত চুক্তির অবমাননা হয়নি বলে সবপক্ষেরই বিশ্বাস।

তবে এক ঘণ্টা ২০ মিনিটব্যাপী ওই বৈঠকের পরও যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিতে থাকবেই এমনটা নিশ্চিত করতে পারছেন না মোগারিনি।

“এখনই আমাদের একটি পারমাণবিক সংকট আছে, উচিত হবে না দ্বিতীয় আরেকটি শুরু করা,” উত্তর কোরিয়াকে ইঙ্গিত করে বলেন তিনি।

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চুক্তির ভবিষ্যৎ পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য রেখে যাবেননা ট্রাম্প।

“জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) মার্কিন জনগণের নিরাপত্তা স্বার্থ অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না তা জানার পরই এ বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট,” বলেন তিনি।

মঙ্গলবার ট্রাম্প জেসিপিওএ-কে ‘আমেরিকার প্রবেশ করা সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও একপাক্ষিক চুক্তি’ অ্যাখ্যা দিয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে বলে সাংবাদিকদের জানান। যদিও কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা খোলাসা করেননি তিনি।

রয়টার্স বলছে, ট্রাম্পকে এই চুক্তি নিয়ে অক্টোবরের ১৫ তারিখের মধ্যে তার সিদ্ধান্তের কথা জানাতে হবে।

ইরান চুক্তি অনুযায়ী কাজ করছে প্রেসিডেন্টের এমন প্রত্যায়ন না পেলে ৬০ দিনের মধ্যে তেহরানের ওপর নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ পাবে মার্কিন কংগ্রেস। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চুক্তির ভবিষ্যৎ কংগ্রেসের হাতে ছেড়ে দিতে পারেন বলে ধারণা করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা।

অক্টোবরের ১৫ তারিখের আগে ট্রাম্প মত বদলে ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকের, যদিও প্রকাশ্যে এবং ঘনিষ্ঠজনদের কাছেও বারবারই চুক্তি নিয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলেও ধারণা তার।

অন্য এক সূত্রের ধারণা, চুক্তি অক্ষুণ্ন রেখেই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও উগ্রবাদী সংগঠনকে সহযোগিতা করার কারণ দেখিয়ে তেহরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। এরপর চুক্তি শক্তভাবে কার্যকরের দাবি তুলতে পারে তারা।

রয়টার্স বলছে, উত্তর কোরিয়ার ধারাবাহিক পারমাণবিক পরীক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মধ্যে জেসিপিওএ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রভাবশালী অন্য দেশগুলোকেও চিন্তার মধ্যে ফেলেছে।

ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়াকে ‘ভুল’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। তবে চুক্তির পর ওই অঞ্চলজুড়ে তেহরানের আধিপত্য বাড়ছে বলেও স্বীকার করে নেন তিনি।

এদিকে উপসাগরীয় একটি দেশের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক চুক্তি ব্যর্থ হলে তার দেশ খুশি হবে।