ট্রাম্পের প্রথম জাতিসংঘ ভাষণ: কিছু নেতার নিন্দা

জাতিসংঘে দেওয়া প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেছে বেছে যেসব সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমালোচনা করেছিলেন তারা তার ভাষণের নিন্দা জানিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2017, 06:57 AM
Updated : 20 Sept 2017, 07:18 AM

বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তার কথিত ‘দুর্বৃত্ত শাসকদের ছোট গোষ্ঠীর’ মধ্যে ইরানকেও অন্তর্ভূক্ত করেছেন এবং বাধ্য করা হলে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে ‘পুরোপুরি ধ্বংস’ করে দিবে বলে মন্তব্য করেছেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, “ট্রাম্পের জ্ঞানহীন ঘৃণা বচন মধ্যযুগের উপযুক্ত, একবিংশ শতাব্দীর জাতিসংঘের নয়।”

তবে ট্রাম্পের ‘ধ্বংস করে দেওয়ার’ হুমকির বিষয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি উত্তর কোরিয়া।

বিবিসি বলেছে, ট্রাম্পের ভাষণে নিজেদের নাগরিকদের উন্নতির চেষ্টারত সার্বভৌম রাষ্ট্রেভরা এক বিশ্বের ছবি প্রকাশ পেলেও ভাষণের বেশিরভাগ সময়ই তিনি তার কথিত ‘দুর্বৃত্ত জাতিগুলোকে’ নিয়ে সমালোচনায় মেতে থাকেন।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তর কোরিয়া অস্ত্র পরীক্ষা অব্যাহত রাখায় দেশটিকে বারবার হুঁশিয়ার করে আসছে ওয়াশিংটন।

এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার সমালোচনা করে এর নেতা কিম জং উনকে ‘আত্মঘাতী মিশনে নামা রকেট মানব’ বলে ব্যঙ্গ করেন।

বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের কিংবা তার মিত্রদেশগুলোর প্রতিরক্ষায় বাধ্য হলে উত্তর কোরিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা ছাড়া উপায় থাকবে না।”

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এ সময় এক শ্রোতা সদস্য হাত দিয়ে তার মুখ ঢাকেন এবং অধিবেশনের হলরুমটি প্রতিক্রিয়ার বিস্মিত জোরালো গুঞ্জনে ভরে ওঠে।

সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গোট ওয়ালস্ট্রমকে হাত ভাঁজ করে রাখতে দেখা যায়; পরে বিবিসিকে তিনি বলেন, “ভুল সময়ে, ভুল দর্শকদের সামনে ভুল ভাষণ ছিল এটি।”  

ভাষণে ‘দুষ্ট অল্পের’ দমনে ‘ন্যায়নিষ্ঠ’ অনেকের প্রতি আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ভাষণে ইরানকে ‘ভুয়া গণতন্ত্রের লেবাসের পেছনে দুর্নীতিবাজ একনায়কদের’ দেশ অভিহিত করে দেশটির ‘প্রধান রপ্তানি সহিংসতা, রক্তপাত ও বিশৃঙ্খলা’ বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে করা বিশ্বশক্তিগুলোর পারমাণবিক চুক্তিকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অংশ নেওয়া অন্যতম বাজে ও সবচেয়ে একপেশে চুক্তি’ বলে উল্লেখ করেন।

ভেনেজুয়েলার সরকারকে দুর্নীতিবাজ ‘সমাজতান্ত্রিক একনায়ক’ অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে হুঁশিয়ার করেন।

জেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ অ্যারিয়েজা ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘হুমকি’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

বলেন, “ট্রাম্প বিশ্বের প্রেসিডেন্ট নন, এমনকি তিনি নিজের সরকারকে পর্যন্ত সামলাতে পারেন না।” 

ভেনেজুয়েলার মিত্র বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস টুইটে বলেছেন, “ট্রাম্পের মতো একজন কোটিপতি সমাজতন্ত্রকে আক্রমণ করেছে এতে আমি বিস্মিত নই। আমাদের সংগ্রাম সব সময়ই আদর্শগত এবং বাস্তবোপযোগী।”

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, “এটি পরিত্যাগ করা মারাত্মক ভুল হবে।” 

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজের ভাষণে ট্রাম্পের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি সংশোধন করা বা এটি পুরোপুরি পরিত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের বাড়তে থাকা প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেন তিনি।