সেনাবাহিনী নিয়ে নীরব থেকে সমালোচিত সু চি

জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে নিশ্চুপ থেকে বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়েছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি।

>>রয়টার্স
Published : 19 Sept 2017, 01:38 PM
Updated : 19 Sept 2017, 01:38 PM

গত ২৪ অগাস্ট রাতে বিদ্রোহী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলা চালানোকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সেনা অভিযান শুরুর পর মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষণ দেন সু চি।

এ ভাষণে তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্ত ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে কিছু বলেননি।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহারে হত্যা, নিপীড়ন, ধর্ষণ করছে এমনকি তাদের ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের।

জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘রাখাইন রাজ্যে যে নিষ্ঠুর সহিংসতা চলছে’ সে বিষয়ে সু চি এবং তার সরকার এখনও বালিতে মুখ গুঁজে আছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থাটির দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোমেজ বলেন, “এ সময়ে তার (সু চি) ভাষণ অসত্য তথ্য ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের অভিযোগের মিশেলের চেয়ে খুব বেশি কিছু বলে বিবেচনা করা যায় না। হত্যা ও জোর করে বিতাড়নের মাধ্যমে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালাতেই রাখাইনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, এর স্বপক্ষে অনেক প্রমাণ আছে।”

“যদিও সু চি তার ভাষণে রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করেছেন এবং এটি শোনাও ইতিবাচক। কিন্তু এখনও সেখানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তিনি নীরব।”

রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ।

যদিও সু চি এ বিষয়ে কোনও কথা বলেননি। বরং তিনি বলেন, তার সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সু চির দাবি, ৫ সেপ্টেম্বরের পর রাখাইনে কোনো ধরনের সহিংসতা বা নির্মূল অভিযান চালানো হয়নি। 

কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সীমান্তের ওপারে বাড়িঘরে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ এর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন এক বিবৃতিতে বলেন, “যদি (সু চির বক্তব্য) সত্যি হয় তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে আমরা যেসব গ্রামগুলো জ্বলতে দেখেছি সেগুলোতে কে আগুন দিচ্ছে।”

মিয়ানমারে ইউনিসেফের উপ প্রতিনিধি পল এডওয়ার্ডস বলেন, “প্রাথমিকভাবে তার (সু চি) ভাষণ আমাদের মেনে নিতেই হবে।”

“কিন্তু যেহেতু আমরা কেউই সেখানে নেই তাই নিশ্চিতভাবেই আমাদের কারও পক্ষে সেখানে আসলেই কি হচ্ছে সেটি জানা সম্ভব না।”