‘বিশ্বকে রক্ষাকারী’ স্তানিস্লাভ পেত্রভ মারা গেছেন

গত শতাব্দীর ঠাণ্ডা লড়াইয়ের চরম পর্যায়ে সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ প্রতিরোধকারী সাবেক সোভিয়েত সামরিক কর্মকর্তা স্তানিস্লাভ পেত্রভ মারা গেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2017, 07:47 AM
Updated : 19 Sept 2017, 07:47 AM

পেত্রভ ৭৭ বছর বয়সে ১৯ মে মাসে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে মারা গেলেও তার মৃত্যুর খবর সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

গত শতাব্দীরে আশির দশকে সোভিয়েত বলয় ও মার্কিন বলয়ে বিভক্ত বিশ্বে চলা ঠাণ্ডা লড়াই চরম পর্যায়ে উঠেছিল। তখন পেত্রভ রাশিয়ার আগাম পারমাণবিক সতর্কীকরণ কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রগুলো পরস্পরের দিকে তাক করা ছিল।

১৯৮৩ সালে তিনি ডিউটিতে থাকার সময় কেন্দ্রের কম্পিউটারগুলো ভুল করে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র এগিয়ে আসছে বলে শনাক্ত করে।

কম্পিউটারগুলো ভুল নির্দেশনা দিচ্ছে, তাৎক্ষণিকভাবে এ সিদ্ধান্ত করে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে কোনো প্রতিবেদন পেশ করেননি পেত্রভ। 

তার এই পদক্ষেপ, ‍যার কথা ঘটনার কয়েক বছর পর প্রকাশিত হয়েছিল, সম্ভবত বিশ্বকে একটি পারমাণবিক যুদ্ধ থেকে রক্ষা করেছে। 

২০১৩ সালে বিবিসি রুশের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পেত্রভ ১৯৮৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের ওই সকালের কথা জানিয়েছিলেন, যখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে কম্পিউটারগুলো দেখাচ্ছিল।

তিনি বলেন, “আমার কাছে সব তথ্যই ছিল (ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে)। চেইন অব কমান্ডের কাছে যদি আমি প্রতিবেদন পাঠাতাম, এর বিরুদ্ধে কেউ একটা কথাও বলতে পারত না।

“আমার যা করার ছিল তা হল ফোনের কাছে গিয়ে শীর্ষ কমান্ডারের কাছে সরাসরি কল করা- কিন্তু আমি তা করিনি। আমার মনে হচ্ছিল আমি একটি গরম কড়াইয়ের ওপর বসে আছি।”

যদিও প্রশিক্ষণের নিদের্শ অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার যোগাযোগ করা উচিত ছিল, তার বদলে পেত্রভ সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরের দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে ফোন করে কম্পিউটারের সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দিয়েছে বলে জানান।

তিনি যদি ভুল করতেন, তাহলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণটি ঘটত।

“২৩ মিনিট পর কিছুই হয়নি বলে বুঝতে পারলাম। যদি সত্যই কোনো হামলার ঘটনা ঘটত তাহলে ওই বিষয়টি আমি এরমধ্যেই জেনে যেতাম। কী বিশাল চাপ থেকে যে মুক্তি পেলাম,” ঘটনা স্মরণ করে বলেন তিনি। 

পরে তদন্ত করে দেখা যায়, মেঘের ওপরে পড়ে ঠিকরে আসা সূর্যের আলোকে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ইঞ্জিন বলে ভুল করেছে সোভিয়েত স্যাটেলাইটগুলো।

কর্মজীবন শেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে অবসরে যান পেত্রভ।

বিশ্বের সমানে পেত্রভের এই কাহিনী প্রথম তুলে ধরেন জার্মানির চলচ্চিত্র নির্মাতা কার্ল শুমাখার। ৭ সেপ্টেম্বর ছিল পেত্রভের জন্মদিন। জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য পেত্রভকে ফোন করেন শুমাখার।

কিন্তু ফোন ধরে তার ছেলে দিমিত্রি পেত্রভ তার বাবা মারা গেছে বলে জানান। শুমাখার অনলাইনে পেত্রভের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করার পর গণমাধ্যমে সেটি খবর হয়।