রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের চেষ্টায় মিয়ানমার: জাতিসংঘ

মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সেনা অভিযানে নির্বিচার বলপ্রয়োগের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের চেষ্টা চলছে বলে মনে করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার যাইদ বিন রাআদ আল হুসাইন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2017, 09:55 AM
Updated : 11 Sept 2017, 01:41 PM

সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় সোমবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে দেওয়া বক্তব্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংস সেনা অভিযানের তীব্র নিন্দা জানান।

রাখাইনে নিপীড়নের মুখে গত দুই সপ্তাহে প্রায় ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এই ব্যাপক সংখ্যক শরণার্থী, যাদের অনেকেই অসুস্থ বা জখম অবস্থায় রয়েছে।

ফলে আগে থেকেই হাজার হাজার রোহিঙ্গার সঙ্গে বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর আশ্রয় ও খাদ্যসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করায় সংকটে পড়েছে।

গত মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে বিদ্রোহীদের হামলার পর পাল্টায় যে অভিযান চলছে তাকে ‘স্পষ্টতই বাড়াবাড়ি’ আখ্যা দিয়ে যাইদ বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় আধাসামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে, সেখানে নিয়মিতভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এমনকি পলাতক বেসামরিক মানুষদের গুলি করা হচ্ছে- এরকম অনেক তথ্য ও স্যাটেলাইটের ছবি আমাদের কাছে রয়েছে।

“এই পরিস্থিতিকে জাতিগোষ্ঠী নিপীড়নের একটি ধ্রুপদী উদাহরণ বলেই মনে হচ্ছে।”

মিয়ানমারের সরকারকে চলমান নৃশংস সামরিক অভিযান বন্ধ করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর জন্য জবাবদিহি করার আহ্বান জানান জাতিসংঘ দূত।

“রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে।”

গত ২৪ অগাস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) হামলার পর নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হয়।

মিয়ানমার তাদের সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে বর্ণনা করেছে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসেবে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামে হামলা ও হত্যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদেরই।

এর মধ্যে রাখাইনে সৃষ্ট মানবিক সংকট থেকে উত্তরণে ত্রাণ সহায়তাকারী সংস্থাগুলোকে কাজ করার সুযোগ দিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার সরকার।

তারা বলছে, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়।

‘বাস্তবতার সম্পূর্ণ অস্বীকৃতি’

মানবাধিকার পর্যবেক্ষক ও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে। স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মিলে রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

তবে বৌদ্ধপ্রধান মিয়ানমার সরকার ‘জাতিগোষ্ঠী নিধনের’ অভিযোগ নাকচ করে বলছে, তাদের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা ‘সন্ত্রাসীদের’ নির্মূলে অভিযান চালাচ্ছে। উল্টো বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা নিজেরাই ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে বলে সরকারের দাবি।

যাইদ বলেন, রোহিঙ্গারা নিজেরা ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে বলে মিয়ানমারের ‘ভনিতা বন্ধ করা’ উচিৎ। তারা বাস্তবতাকে সম্পূর্ণ অস্বীকারের মাধ্যমে বিশ্ব মহলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

রোহিঙ্গা নির্যাতনের কারণে মিয়ানমারের সমালোচনা করে আসছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন। সমালোচনায় পড়েছেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি।

কেউ কেউ শান্তির জন্য পাওয়া তার নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।