ভার্জিনিয়ায় সহিংসতা: ফের দুই পক্ষকেই দোষারোপ ট্রাম্পের

ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে শ্বেত জাতীয়তাবাদীদের সমাবেশকে ঘিরে সহিংসতার জন্য ফের উভয়পক্ষকে দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2017, 06:23 AM
Updated : 16 August 2017, 06:23 AM

মঙ্গলবার দেওয়া বক্তব্যে ওই সহিংসতার জন্য ডান ও বাম চরমপন্থিদের দায়ী করেছেন ট্রাম্প; কিন্তু এর আগের দিন সোমবার হোয়াইটস হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার জন্য শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের দায়ী করেছিলেন তিনি।

রাগান্বিত এবং বিরক্ত ট্রাম্প এদিন জানালেন, দোষ উভয় পক্ষই করেছে;  বললেন, তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াও ছিল তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া।

“এদের মধ্যে একপক্ষে ছিল খারাপদের একটি দল, আবার অন্যপক্ষে যারা ছিল তারাও ছিল খুবই সহিংস। কেউই এটি বলতে চাইবে না, আমি বললাম,” ডান-বাম উভয় অংশের উগ্রপন্থিদের ‍উদ্দেশ্য করে এমনটাই বলেন ট্রাম্প। 

“সবাই নব্য নাৎসিবাদী ছিল না, বিশ্বাস করুন। সবাই সেখানে শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদী ছিলেন তেমনটাও নয়; অপরপক্ষে যারা ছিল, আপনারা তাদের বাম ডাকতে পারেন, তারাও সহিংস হয়ে অন্যদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। যা খুশি তাই বলতে পারেন, কিন্তু এমনটাই ঘটেছিল।”

শনিবার ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের শার্লটসভিলে ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ওই সহিংসতার সময় ডানপন্থিবিরোধী প্রতিবাদকারীদের ভিড়ে একটি চলন্ত গাড়ি উঠিয়ে দেওয়া হলে এক নারী নিহত এবং অন্তত ১৯ জন আহত হন। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ওহাইও অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা ২০ বছর বয়সী জেমস ফিল্ডকে করে পুলিশ; যাকে নাৎসিদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একই সময় সংঘর্ষ থামাতে যাওয়া পুলিশের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হলে ভেতরে থাকা দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন।

শার্লটসভিলের সহিংসতা নিয়ে ট্রাম্পের এই সুর বদল যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বর্ণবাদকে উসকে দেবে এবং জাতীয় সংকটে ট্রাম্পের নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  

ঘটনার পর ট্রাম্পের দেওয়া প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছিল ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানরা।

চাপের মুখে সোমবার সহিংসতার জন্য কু ক্লুক্স ক্ল্যান, নিও নাজি ও শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু একদিন পরই আগের অবস্থানে ফিরে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল এই প্রেসিডেন্ট।

সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য তার সঙ্গে উগ্র ডানপন্থিদের ঘনিষ্ঠতারই ইঙ্গিত দেয়; যে কারণে সমর্থকদের হতাশ করেননি তিনি।

ডানপন্থি উগ্রবাদী সংগঠন কু ক্লুক্স ক্ল্যানের সাবেক নেতা ডেভিড ডিউক তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে স্বাগত জানান।

“শার্লটসভিলে নিয়ে সাহসের সঙ্গে সত্য বলায় এবং বিএলএম/আন্তিফা-র বামপন্থি সন্ত্রাসীদের নিন্দা জানানোর সততার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প,” টুইটারে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ (বিএলএম) এবং ফ্যাসিস্ট-বিরোধীদের উল্লেখ করে বলেন ডিউক।

অন্যদিকে ডেমোক্রেটরা বলছেন, ট্রাম্পের দেওয়া সর্বশেষ মন্তব্যে এটাই প্রমাণ হয় যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শ্বেত- জাতীয়তাবাদী এবং তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের নৈতিকভাবে সমান পাল্লায় মাপেন।

“কোনো পক্ষ না নেওয়ার কথা বলে ট্রাম্প স্পষ্টতই একটি পক্ষ নিয়েছেন। ডেভিড ডিউক এবং শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা যখন আপনার মন্তব্যে উল্লসিত হয়, তখন বলাই যায়, আপনি যা করছেন, তা খুব, খুব ভুল,” নিজ প্রতিক্রিয়ায় বলেন ডেমোক্রেট সিনেটর চাক শুমার।

একই মত ভার্জিনিয়ার গভর্নর টেরি ম্যাকঅলিফের। ডেমোক্রেট এ গভর্নর বলেন, সহিংসতা নিয়ে ট্রাম্প যেভাবে চরিত্র বর্ণনা করেছেন তা মূল অংশ এড়িয়ে গেছে।

“নিও-নাজি, ক্ল্যানসম্যানরা এবং শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা শার্লটসভিলে এসেছিল অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে, মুখে ঘৃণার স্লোগান নিয়ে তারা চেয়েছিল সংঘর্ষ বাধাতে। তাদেরই একজন অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের অংশ হিসেবে অল্পবয়সী এক নারীকে হত্যা করেছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের রক্ষা করতে গিয়ে আমরা হারিয়েছি দুইজন চমৎকার কর্মকর্তারকেও। এটা মোটেও দুই পক্ষের ঘটনা নয়,” বলেন তিনি।

সোমবার ট্রাম্প যখন উগ্র ডানপন্থিদের দায়ী করে বিবৃতি দিলেন তখন তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ নিয়ে ওঠা বিতর্ককে পেছনে ফেলার কথা ভেবে হাঁপ ছেড়েছিলেন; একদিনের মধ্যে তাদের মাথায় আবারও পুরনো দুশ্চিন্তা ভর করেছে যা আরও কয়েকদিন চলতে পারে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবার তার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এএফএল-সিআইও’র প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ট্রুমকা।

“আমরা এমন এক প্রেসিডেন্টের জন্য কাউন্সিলে বসতে পারি না, যিনি হিংসা ও অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের প্রতি সহনশীল।”

আগেরদিন একই কারণে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন মার্ক সিইও কেনেথ ফ্র্যাজিয়ারসহ মোট তিনজন।

নতুন মন্তব্য ট্রাম্পকে তার নীতি বাস্তবায়নে সামনের দিনে সমস্যায় ফেলতে পারে বলেও ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে তা জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, “পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত এ বিষয়ে কথা একেবারেই না বলা।”