বাবা-মা আর হাসপাতালের মধ্যে পাঁচ মাস ধরে আইনি লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, ক্রিস গার্ড ও কোনি ইয়েট গার্ডের একমাত্র ছেলে চার্লিকে গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতাল থেকে কোনো একটি হসপিসে (মুমূর্ষুদের জন্য সেবাকেন্দ্র) সরিয়ে নেওয়া হবে।
তারপর সেখানে কোনো এক সময় চিকিৎসকরা তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেবেন।
এর অর্থ হল, হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরপরই মৃত্যু ঘটবে বিরল জিনগত রোগের শিকার চার্লির, যাকে নিয়ে বাবা-মায়ের আইনি লড়াইয়ের খবর পুরো বিশ্বের নজর কেড়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চার্লির বাবা-মা শেষ সময়ে তাদের সন্তানকে নিজেদের কাছে রাখতে চেয়েছিলেন। চার্লিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে চিকিৎসার চেষ্টা করার কথাও তারা ভেবেছিলেন।
অন্যদিকে চিকিৎসকরা বলছিলেন, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ ডিপ্লেশন সিনড্রোমে আক্রান্ত চার্লিকে যুক্তরষ্ট্রে নিয়ে লাভ হবে না। লাইফ সাপোর্টে রেখে দেওয়ার চেয়ে স্বাভাবিক মৃত্যুই হবে তার জন্য কম যন্ত্রণাদায়ক।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, চার্লিকে হাসপাতাল থেকে হসপিসে সরিয়ে নিতে হবে। পরে কোনো এক সময় তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হবে। তবে এর দিনক্ষণ প্রকাশ করা হবে না।
রয়ের পর কোনি গার্ড বলেন, “আমরা শুধু আমাদের সন্তানের জন্য একটু শান্তি চেয়েছিলাম। কোনো হাসপাতাল, কোনো আইনজীবী, আদালত, মিডিয়া কিছুই আমরা চাইনি… শুধু চেয়েছিলাম সবকিছু ছেড়ে আরও একটু সময় চার্লির পাশে থাকতে, আরও একটু ভালোবাসা দিয়ে তাকে বিদায় জানাতে।”
গত বছর ৪ অগস্ট জন্ম হওয়ার পর অক্টোবরে চার্লির সমস্যাগুলো ধরা পড়তে শুরু করে। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে ১১ অক্টোবর তাকে লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে ভর্তি করেন কোনি আর ক্রিস।
চার্লিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিলে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিতে তাকে বাঁচানো যাবে এই আশায় ১৩ লাখ পাউন্ডও জোগাড় করেছিলে ক্রিস-কোনি। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চার্লির কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে মার্চে শুরু হয় আইনি লড়াই।
লন্ডন হাই কোর্টের একজন বিচারক সব যুক্তি শোনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায় সায় দিলে চার্লির বাবা-মা আপিল করেন। কিন্তু ৮ জুন আপিল আদালতেও তাদের আবেদন নাকচ হয়ে যায়।
এরপর চার্লির বাবা-মা যান ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে। ২০ জুন ওই আদালত জানায়, তারা এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
এই পরিস্থিতিতে গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নতুন করে শুনানির জন্য হাই কোর্টে আবেদন করে। পরীক্ষা নিরীক্ষাও শুরু হয় নতুন করে।
ওই পরীক্ষায় জানা যায়, চার্লির অবস্থা আরও খারাপের দিকে গেছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৪ এপ্রিল চার্লির বাবা-মা জানান, তারা আর আইনি লড়াই চালাতে চান না।
তারা শেষ সময়ে ছেলেকে নিজেদের কাছে রাখতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এই সময়ে যে যত্ন চার্লির দরকার, বাড়িতে তা সম্ভব নয়।
তখন চার্লির বাবা-মা চান, তাদের সন্তানকে শেষ সময়ে কোনো একটি হসপিসে রাখা হোক। কিন্তু তাতেও আপত্তি তুলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হসপিস মৃত্যৃপথযাত্রীদের শেষ সময়ের সেবা দেয়। সেখানে চার্লির মত জটিলতা নিয়ে কোনো শিশুকে রাখা চলে না।
চার্লির মা কোনি গার্ড বলেন, সন্তানের জন্য যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে, খুব কম মানুষের তেমন দুর্ভাগ্য হয়। ছেলের জীবন, মৃত্যু- কোনোটাই তো তাদের হাতে নেই।
আর গ্রেট ওরমন্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের বাইরে থাকার মত শারীরিক অবস্থা চার্লির নেই। শিশুদের জন্য বিশেষায়িত কোনো একটি হসপিসের ব্যবস্থা তার জন্য করা হবে, যাতে তার শেষ সময়টা যতোটা সম্ভব কম কষ্টদায়ক ও শান্তিপূর্ণ হয়।