যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে জ্বালানি কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে উদ্বিগ্ন জার্মানিসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ।
ইইউ এর উদ্বেগ আমলে না নেওয়া হলে এর সমুচিত জবাবও দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আপত্তি উপেক্ষা করে রাশিয়ায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিল পাস করায় ইউরোপীয় কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এ বিলের কারণে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক উন্নয়নের আশায় বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। রাশিয়াকে ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে শাস্তি দেওয়া বিলটির অন্যতম উদ্দেশ্য।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ-ক্লদে জাঙ্কার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “রাশিয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিধানে ইইউ পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
কিন্তু এ পদক্ষেপের কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও ইইউ এর জ্বালানি নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।
জার্মানিসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়েছে। কারণ, নতুন মার্কিন আইনের কারণে রাশিয়া থেকে গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে কাজ করা কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আইনটি এরই মধ্যে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের পাস হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে যাওয়ার আগে এটি সিনেটেও পাস হতে হবে। ট্রাম্প আইনটিতে ভেটো দেবেন কিনা সেটি এখনও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়া ছাড়াও ২০১৪ সালে ইউক্রেইনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলের জন্য দেশটিকে আরও সাজার মুখে ফেলা নতুন আইনের লক্ষ্য।
এটি পাস হলে যা ঘটবে:
. রাশিয়ার জ্বালানি উন্নয়নে অবদান রাখা ইউরোপের ফার্মগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাশিয়া থেকে জার্মানিতে জ্বালানি সরবরাহের জন্য পাইপলাইন নিয়ে কাজ করা কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
. রাশিয়ার ব্যাংকগুলো এবং তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোতে ঋণের মেয়াদকমে আসবে।
. রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ব খনি ও রেলওয়ে কোম্পানিগুলোর সম্পদ জব্দ হবে।
. বর্তমানে রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো পাকাপোক্ত হয়ে উঠবে যাতে ভবিষ্যতে সেগুলো তুলে নেওয়া আরও কঠিন হয়।
. ট্রাম্প আর এককভাবে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে সক্ষম থাকবেন না।
ক্রিমিয়া দখলের জন্য রাশিয়ার অনেক কর্মকর্তা এবং কোম্পানি ইতোমধ্যেই একগাদা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে আছে।
গত ডিসেম্বরে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগে দেশটির ৩৫ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার দুটি কম্পাউন্ড বন্ধ করেছিলেন।
ইইউ এর প্রতিক্রিয়া কি?
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারা কূটনৈতিক চ্যানেলের মধ্য দিয়ে তাদের উদ্বেগ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঙ্কার বলেছেন, এ উদ্বেগ সম্পর্কে জানার পরও সেগুলো যথাযথভাবে বিবেচনায় না নেওয়া হলে “আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই এর সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত আছি।”
তিনি বলেন, “আমেরিকা সর্বাগ্রে- কথাটির মানেই এই নয় যে, ইউরোপের স্বার্থ সবার শেষে থাকবে।” তবে ইইউ কি পাল্টা ব্যবস্থা নেবে সে ব্যাপারে জাঙ্কার কিছু বলেন নি।
সামনে কি ঘটবে?
নতুন বিলটিতে এখনও সিনেটের ভোট প্রয়োজন। কিন্তু সেটি কখন হবে তা এখনও পরিষ্কার জানা য়াযনি।
বিলটি যদি কোনও পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়াই সিনেটে পাস হয়ে যায় তাহলে তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, ট্রাম্প বরাবরই রাশিয়ার প্রতি অনেকটা সম্প্রীতিসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দিয়ে এসেছেন।
কংগ্রেসের দুই কক্ষেই যদি প্রায় একই তবে সামান্য আলাদা বিল পাস হয়, তাহলে একটি কমিটি করে আপোসরফার মধ্য দিয়ে বিলের নতুন সংস্করণ অনুমোদনের চেষ্টা চলবে।
এরপর প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেট উভয় কক্ষে বিল পাস হওয়া মাত্রই সেটি স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে।