বিশেষ ভিডিও হাতে আসার দাবি করে আফগান ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা সিএনএন এবিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
দুই দেশের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এক সময়ের শত্রু যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে মস্কো অস্ত্র সরবরাহ করছে। এর আগে এপ্রিলে আফগান বিদ্রোহীদের রুশ সরকার অস্ত্র দিকে চাচ্ছিল বলে উদ্বেগ দেখিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা কর্মকর্তারা।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, দুটি ভিডিওতে স্নাইপার রাইফেল ও হরেক রকম কালাশনিক ও ভারি মেশিনগান দেখা যায়, যেগুলোতে উৎপাদন বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। সব তুলে ফেলা হয়েছে, যাতে উৎস দেশের নাম না জানা যায়।
হেরাতের কাছে তালেবানদের বিচ্ছিন্ন একটি গোষ্ঠী বলছে, তারা প্রতিদ্বন্দ্বী মূলধারার একটি তালেবান গোষ্ঠীকে হারিয়ে এই অস্ত্রগুলো দখলে পেয়েছে। অন্য গোষ্ঠীটির বক্তব্য, তারা এসব অস্ত্র তাজিকিস্তানের সীমান্ত থেকে বিনামূল্যে পেয়েছে এবং যেগুলো ‘রুশরা’ দিয়েছে।
এসব ভিডিওতে অস্ত্র বিক্রির প্রশ্নাতীত প্রমাণ নেই; মস্কোও সুনির্দিষ্টভাবে এসবের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করছে। তবে যুদ্ধক্ষেত্রের প্রথম দিককার অস্ত্রের প্রবাহের যেসব প্রমাণ এসেছে তাতেই মস্কোর উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে আফগান ও মার্কিন সরকার।
আফগান সরকারের মুখপাত্র সেদিক সেদিকি বলেন, “রুশরা বলছে, তারা তালেবানদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে। অনেকের কাছ থেকেই আমাদের কাছে তথ্য আছে, তারা তালেবানদের অস্ত্র সরবরাহ করছে।
“সে কারণেই তালেবানদের প্রতি ওই সমর্থনের মাত্রা কোন পর্যায়ে রয়েছে তা খুঁজে বের করতে কাজ করছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।”
সিএনএন বলছে, এই প্রতিবেদনের বিষয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্তব্য করতে না চাইলেও এর আগে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে তালেবানদেরকে রাশিয়ার অস্ত্র সরবরাহের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে; পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা ঢাকতেই এসব গল্প ফাঁদা হয়েছে।
রাশিয়ার দাবি, তালেবানদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নিতান্তই শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার জেনারেল জন নিকলসনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তালেবানদেরকে রাশিয়ার অস্ত্র সরবরাহের খবর তিনি উড়িয়ে দেবেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, “না আমি এই খবর উড়িয়ে দিচ্ছি না।”
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল জোসেফ ভোটেল মার্চে কংগ্রেস কমিটকে বলেন, আফগানিস্তানে রুশরা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় রয়েছে বলে তার বিশ্বাস।
“আমার মনে হয়, এটা ধারণা করা অত্যুক্তি হবে না যে, তারা অস্ত্রের মতো কিছু দিয়ে তালেবানদের সমর্থন দিচ্ছে অথবা অন্য কোনো বিষয় থাকতে পারে।”
একটি ভিডিওতে হেরাত গ্রুপকে অস্ত্রগুলো ঘষামাজা করতে দেখা যায়। তারা বলছিলেন, মোল্লা হায়বতুল্লাহর নেতৃত্বে মূলধারার গ্রুপকে পরাজিত করে দখল করেছে।
“আইএসের সঙ্গে লড়াই জোরদারে ইরানের মাধ্যমে রাশিয়া এসব অস্ত্র মোল্লা হায়বতুল্লাহর দলকে দিয়েছিল। তবে তারা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে,” বলেন এই প্রুপের উপনেতা মোল্লা আবদুল মানান নিয়াজী।
কাবুলের আশপাশে ধারণ করা দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, মুখোশ পড়া এক তালেবান যোদ্ধা অস্ত্র নিয়ে মহড়ারা সময় বলছে, তাজিক সীমান্ত দিয়ে কুন্দজের উত্তরাঞ্চল থেকে বিনামূল্যে তারা এসব পেয়েছেন,।
“এগুলো সম্প্রতি আমাদের হাতে এসেছে। রাশিয়ার তৈরি এগুলো, খুব ভালো জিনিস।”
তবে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান স্মল আর্মস সার্ভে এসব ভিডিও পরীক্ষা করে বলেছে, এসব অস্ত্র যে রুশ সরকারের সম্পর্কিত তার প্রত্যক্ষ্য কোনো প্রমাণ নেই। এগুলো আধুনিক বা বিরল নয়। এমনকি এগুলির কোনোটা চীনের তৈরি, যেগুলো অনলাইনেও কিনতে পাওয়া যায়।
তবে সংস্থাটির একজন বেনজামিন কিং বলেন, “তবে এই অস্ত্রগুলোতে উৎপাদনের তথ্য ছিল না, যেটা আমরা চেয়েছিলাম।”