গত মাসে রেশাম খান ও জামিল মুখতার নামে দুই চাচাত ভাই-বোনের উপর দাহ্যবস্তু ছুঁড়ে মারা হয়, যাতে দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তারা।
এর আগে এপ্রিলে পূর্ব লন্ডনে একটি ক্লাবে হামলায় এসিড মারা হয়, যাতে আহত হন ২০ জন।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্যের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের রাজধানীতে ৪৫৮টি এসিড হামলা হয়, যেখানে তার আগের বছর হয়েছিল ২৬১টি।
পুলিশের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইংল্যান্ডে এসিড হামলার ঘটনা ২০১২ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।
এসব হামলার অধিকাংশই ঘটেছে লন্ডনে। এই শহরে ২০১০ সাল থেকে এক হাজার ৮০০ এর বেশি হামলায় দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
প্রথমদিকে প্রতিশোধমূলক হামলায় এসিডের ব্যবহার হলেও পরে ধীরে ধীরে গাড়ি ডাকাতি ও ছিনতাইয়েও তা ব্যবহার করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েকটি কারণে হামলকারীরা প্রথম পছন্দ হিসাবে এসিডকেই বেছে নিচ্ছেন।
প্রথমত, ছুরি নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ যতোটা গুরুতর, এসিড হামলার অভিযোগ ততোটা নয়। তাছাড়া ছুরি হামলার চেয়ে এসিড হামলায় সাজাও কিছুটা কম হয়।
দ্বিতীয়ত, এসিড হামলায় ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার সুযোগ তেমন থাকে না। একটি ছুরির তুলনায় এসিড হামলায় ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল নষ্ট করে ফেলা বেশি সহজ।
তৃতীয়ত, এসিড খুবই সহজলভ্য।
ব্রিটেনে এসিড হামলা বাড়তে থাকার মুখে এ হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছে এসিড হামলা বন্ধের পক্ষে প্রচার চালানো সংগঠন ‘স্টপ এসিড অ্যাটাক’। তারা বলছে, এসিড হামলা হলে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াটা জরুরি।
এসিড হামলা হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করতে হবে:
১. এসিড হামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে শরীরের ঝলসে যাওয়া স্থানে প্রচুর পরিষ্কার পানি বা স্যালাইন পানি ঢালতে হবে।
২. এসিড আক্রান্ত স্থানে ময়লা পানি দেওয়া যাবে না, এতে মারাত্মক সংক্রমণ (ইনফেকশন) ঘটতে পারে।
৩. জ্বালা-পোড়া কমতে শুরু করা না পর্যন্ত ঝলসানো স্থানে প্রচুর ঠাণ্ডা পানি ঢালতে হবে (খুব বেশি ঠাণ্ডা নয়)। জ্বলা কমতে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগতে পারে।
৪. এসিড লাগা সব অলঙ্কার ও কাপড় খুলে ফেলতে হবে।
৫. আক্রান্ত স্থানে কোনো ধরনের ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করা যাবে না। এতে চিকিৎসকদের চিকিৎসা শুরুতে দেরি হতে পারে।
৬. সম্ভব হলে এসিডে পোড়া জায়গা জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে হালকাভাবে ঘিরে রাখা যায়। এতে ত্বক ধুলো-ময়লা ও দূষণ থেকে রক্ষা পাবে।
তাকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। কারণ এসিডে পোড়া স্থানে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে খুব সহজেই। এতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এসিডে পোড়া রোগীকে দিনে দুই-তিনবার পরিষ্কার করতে হবে। এ ধরনের রোগীকে দেখতে গেলে তার জন্য খাবার নেওয়া যাবে না।
এসিডদগ্ধ রোগীর ঘন ঘন ড্রেসিং পাল্টাতে হবে এবং তার ফিজিওথেরাপিরও প্রয়োজন পড়তে পারে। কারণ এসিডে ত্বকের নিচের স্নায়ু স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ক্ষত সারাতে রোগীর দেহে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজন পড়ে। তাই সেরে ওঠার জন্য কোন ধরনের খাবার সবচেয়ে ভালো হবে সে পরামর্শের জন্য ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
মারাত্মক এসিডদগ্ধ রোগীর ক্ষেত্রে ঝলসে যাওয়া স্থান আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়তে পারে।