অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি: খালি করে ফেলা হয়েছে লন্ডনের ৭০০ ফ্ল্যাট

গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দুই সপ্তাহের মাথায় ঝুঁকিতে থাকা লন্ডনের সুইস কটেজ এলাকার ক্যামডেন কাউন্সিলের চারটি টাওয়ারের সব বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

লন্ডন প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2017, 07:29 AM
Updated : 24 June 2017, 10:20 AM

চালকট এস্টেটভুক্ত ওই টাওয়ারগুলোর ৭০০ ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের ‘জরুরি অগ্নি নিরাপত্তাজনিত কারণে’ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে বিবিসি।

কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের জন্য হোটেল রুম বরাদ্দ করলেও অন্তত একশজন জানিয়েছেন, তারা কাছাকাছি একটি বিশ্রাম কেন্দ্রের বিছানায় রাত কাটিয়েছেন।

চালকটের এই টাওয়ারগুলোর বাইরেও পুড়ে যাওয়া গ্রেনফেল টাওয়ারের মতো প্লাস্টিক আবরণ দেওয়া রয়েছে।  ২০০৬ এবং ২০০৯ সালে রাইডন ফার্ম এই আবরণ দিয়েই ভবনগুলোর সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছিল।

একই কোম্পানি ২০১৫-১৬ সালে গ্রেনফেলের সংস্কার কাজের দেখভাল করে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

পশ্চিম লন্ডনে অভিজাত পাড়ার কাছের সোশাল হাউজিং ব্লকে জরাজীর্ণ গ্রেনফেল টাওয়ারটির বাইরের রূপ বদলে অবয়বে চাকচিক্য আনতে মোড়ানো হয়েছিল নীল-সবুজ প্লাস্টিক আবরণে। একাজে সস্তা এবং অগ্নিনিরোধক নয়- এমন উপাদান ব্যবহার করা হয়েছিল।

এ কারণে ২৪ তলা ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল বলে ধারণা অনেকের।

ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে ৭৮ জনের প্রাণহানির পর যুক্তরাজ্যজুড়ে বিভিন্ন টাওয়ার ব্লক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে যে, সেগুলোর আবরণে কোনো দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা।

ক্যামডেন কাউন্সিল জানিয়েছে, তারা চালকটের ৫টি টাওয়ারেরই বাইরের ওই প্লাস্টিক আবরণ সরিয়ে ফেলবে।

প্রথমে টাওয়ারগুলির মধ্যে একটি ‘টপলো’-র বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও পরে সব টাওয়ারই খালি করার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ফ্ল্যাটগুলোর গ্যাস পাইপ নিরোধক ও অগ্নি-দরজাগুলো নিয়েও উদ্বিগ্ন।

চালকটের বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা কাউন্সিল কর্মকর্তাদের এক জনসভায় অংশ নেন। সেখানে তাদের ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করা হয়।

এরপর শুক্রবার তারা ফ্ল্যাট খালি করার নির্দেশনা শোনেন।

ফায়ার সার্ভিসের বরাত দিয়ে বাসিন্দারা বলছেন, ওই ব্লকের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নয় বলেছে ফায়ার সার্ভিস। এরপরই বাসিন্দাদের সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে চালকট এস্টেটভুক্ত এলাকায় বিপুল সংখ্যক বাঙালির বসবাস করেন জানিয়ে ক্যামডেন বারার সাবেক কাউন্সিলর ও বাঙালি কমিউনিটি নেতা ফজলুল করিম চৌধুরী অপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরিয়ে নেওয়া পরিবারের তালিকায় বাঙালি পরিবার থাকতে পারে।

ক্যামডেন বারার এক সময়ের কাউন্সিলর ছিলেন বাঙালি টিউলিপ সিদ্দিকও, যিনি বর্তমানে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে এমপি। টিউলিপের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নে ক্যামডেন বারার কিছু অংশও রয়েছে।

গত পাঁচ বছরে চালকট এলাকায় তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেন টিউলিপ।

ডেইলি ইন্ডিপেনডেন্টকে তিনি বলেন, একজন স্থানীয় এমপি হিসেবে এবং সাবেক কাউন্সিলর হিসেবে কোনোভাবেই আমরা মানুষের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারি না।

সরিয়ে নেওয়া বাসিন্দাদের জন্য কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ ২৭০টি হোটেল কক্ষ বুকিং করে।  জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে কিংস ক্রসের ক্যামডেন সেন্টার এবং সুইস কটেজের বিশ্রাম কেন্দ্রও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।

বাসিন্দারা চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে যতবার খুশি ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের সহায়তায় তাদের ফ্ল্যাটে গিয়ে মালামাল সংগ্রহ করতে পারবে বলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।