নতুন যুবরাজ: সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতি আরো আগ্রাসী হয়ে উঠবে?

মোহাম্মদ বিন সালমানকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সৌদি রাজপরিবার তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে সরে আসাসহ বিভিন্ন খাতে আমূল সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছে বলে মনে করছেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা।

>>রয়টার্স
Published : 22 June 2017, 10:53 AM
Updated : 22 June 2017, 10:53 AM

বুধবার ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে নিজের ছেলে মোহাম্মদকে সৌদি আরবের নতুন ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। মোহাম্মদ এর আগে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ছিলেন।

সৌদি রাজপরিবারকে যারা ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে আসছেন, তাদের অনেকেই সালমান পুত্রের যুবরাজ হওয়াকে অনুমিতই ভাবছেন । যদিও ইয়েমেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যে এই নিয়োগে তারাও আশ্চর্য হয়েছেন।

“তার অধীনে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতি আরো আগ্রাসী হয়ে উঠবে; পাশাপাশি ইরানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে তিনি বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হবেন না। এখন দেখার বিষয়, কখন ইরানের সঙ্গে নতুন উত্তেজনা শুরু হয়,” বলেন সুইজারল্যান্ডভিত্তিক জ্বালানি তেল বিষয়ক পরামর্শমূলক প্রতিষ্ঠান পেট্রোমেট্রিক্সের কর্মকর্তা অলিভার জ্যাকব।

মোহাম্মদের নিয়োগ নিয়ে তির্যক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান।  তারা বলছে, নায়েফকে সরিয়ে সালমান পুত্রের ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার ঘটনা আদতে ‘নীরব অভ্যূত্থান’।

গত মাসে মোহাম্মদের করা এক মন্তব্য নিয়েও ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনা ছিল। মোহাম্মদ সে সময় বলেছিলেন, “যুদ্ধ ইরান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া উচিত।”

পাল্টা বক্তব্যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সৌদি নেতাকে ‘আহাম্মক’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

দুই বছর আগে ভাই আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর সালমান সৌদি বাদশাহর দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত খুব অল্প লোকই মোহাম্মদের নাম শুনেছিল।

ক্রাউন প্রিন্স হওয়ায় এখন থেকে তিনিই উপ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন।  প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও তার হাতেই থাকছে।

যুবরাজ হওয়ায় মোহাম্মদ সৌদি আরবের জ্বালানি তেল নির্ভরতা কমাতে দ্রুত বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবেন বলে অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা; যার মধ্যে আছে দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর আংশিক বেসরকারিকরণ।

রাজপরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে ৩১ বছর বয়সী মোহাম্মদ দীর্ঘদিন ধরেই কোম্পানিটির শীর্ষ পদে আসীন।

ইয়েমেনে সামরিক অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি রয়েল কোর্টেরও প্রধান।  কিং সউদ ইউনিভার্সিটির আইনের ডিগ্রি রয়েছে তার। 

“এই পরিবর্তন সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সংস্কারে বড় ধরনের গতির সঞ্চার করবে, যুবরাজ মোহাম্মদ যার স্থপতি,” বলেন গালফ রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক জন স্ফাকিয়ানাকিস।

সৌদি রাজপরিবারের এই রদবদলের ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়ে টুইটারে ঝড় চলছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

বলা হচ্ছে, বাদশাহ সালমান বিন আব্দুলআজিজ আল সৌদ তার প্রিয়পুত্রকেই সিংহাসনের উত্তরাধিকার মনোনীত করেছেন, যার তারুণ্য ও  গতিশীল নেতৃত্ব সৌদির তরুণ জনগোষ্ঠীর বেশ পছন্দ।  দেশটিতে এই তরুণরাই এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ আর তারা পরিবর্তনের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী।

দশককাল ধরে সৌদি রাজপরিবারের অল্প কজন রাজপুত্র বিশ্বমঞ্চে সৌদি আরবের অবস্থান সামলেছেন; এদের মধ্যে মোহাম্মদ দেখতেন কূটনীতি, পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে তার দরকষাকষির ক্ষমতা ট্রাম্প- পুতিন দুজনকেই মুগ্ধ করেছে বলে গণমাধ্যগুলোর খবর।

সালমান পুত্র মোহাম্মদের এই ‘দ্রুত উত্থান’ সৌদি রাজপরিবারে বিভক্তিও সৃষ্টি করতে পারে বলে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন, অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরণের নানান সম্ভাবনার কথা শোনা গেলেও তার বাস্তব প্রমাণ মেলেনি।

মক্কার আল সাফা মসজিদে মোহাম্মদের অভিষেক অনুষ্ঠানেও রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ বিভক্তির লেশ পাওয়া যায়নি। সৌদি টেলিভিশনে বারবার প্রচারিত ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, পদচ্যুত যুবরাজ নায়েফ নতুন যুবরাজের সামনে নত হয়ে তার হাতে চুমু খেয়ে বাদশাহর সিদ্ধান্তকে হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন।

নায়েফকে সরিয়ে মোহাম্মদকে বসানোর ভেতর দিয়ে বাদশাহ সালমান উল্টো সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে রক্তপাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা কমিয়েছেন বলে ধারণা করছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটপ্রাচ্য স্টাডিজের অধ্যাপক বার্নার্ড হেইকেল।

“এটা স্বাভাবিক ও রক্তপাতহীন পরিবর্তন। এখন সবটাই সবটাই স্পষ্ট, সোজা। এই ধরনের সিদ্ধান্ত ঝুঁকির পরিমাণও অনেকখানি কমিয়ে আনে। কে দায়িত্বে যাবে এখন তা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন থাকছে না,” বলেন বার্নার্ড।