মার্কিন জঙ্গি বিমানের গুলিতে সিরীয় জঙ্গি বিমান ভূপাতিত

সিরিয়ার রাক্কা প্রদেশের গ্রামীণ এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানের গুলিতে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর একটি জঙ্গি বিমান ভূপাতিত হয়েছে।

>>রয়টার্স
Published : 19 June 2017, 07:14 AM
Updated : 19 June 2017, 07:34 AM

২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম কোনো সিরীয় সামরিক বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করল যুক্তরাষ্ট্র।

রোববারের এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর জঙ্গি বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে আর তারপর থেকে এর পাইলট নিখোঁজ রয়েছেন বলে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী। 

ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে যাওয়ার সময় জঙ্গি বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয় বলে অভিযোগ করেছে দামেস্ক।

অপরদিকে ওয়াশিংটনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহীদের অবস্থানের কাছে বোমা ফেলার পর সিরীয় জঙ্গি বিমানটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে।

রোববার বিকেলে রাক্কার রাসাফাহ গ্রামের কাছে ঘটনাটি ঘটেছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে সিরীয় সেনাবাহিনী।

একটি এসইউ-২২ জঙ্গি বিমান

বলেছে, “নিজেদের এলাকার ভিতরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত একমাত্র কার্যকর বাহিনী হিসেবে সেনাবাহিনীর উদ্যোগ দুর্বল করতে অসৎ এই হামলাটি চালানো হয়েছে।

“এমন এক সময় এটি ঘটানো হয়েছে যখন সিরীয় সেনাবাহিনী ও তার মিত্ররা সন্ত্রাসীগোষ্ঠী দায়েশের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিষ্কার অগ্রগতি অর্জন করছে।”

পরে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাবকাহ-র কাছে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সের (এসডিএফ) যোদ্ধাদের রক্ষা করতে ‘জোট অংশীদারদের সম্মিলিত আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা হিসেবে’ সিরীয় বিমানটি ভূপাতিত করা হয়েছে।

তারা দাবি করেছে, এর আগে ‘সিরীয় জান্তার বাহিনীগুলো’ তাবকার দক্ষিণে এসডিএফ অধিকৃত একটি শহরে হামলা চালিয়ে বহু যোদ্ধাকে আহত করে তাদের ওই শহর থেকে হটিয়ে দিয়েছে।

পরে জোট বাহিনীর বিমানগুলো শক্তি প্রদর্শন করে তাদের থামানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সিরীয় সেনাবাহিনীর একটি এসইউ-২২ জঙ্গি বিমান এসডিএফ বাহিনীর অবস্থানের কাছে বোমা ফেললে যুক্তরাষ্ট্রের এফ/এ-১৮ই সুপার হর্নেট জঙ্গি বিমান তাৎক্ষণিকভাবে সিরীয় বিমানটিকে গুলি করে ফেলে দেয়।

সিরীয় বিমানটি ফেলে দেয়ার আগে ‘পরিস্থিতি যেন আরো নাজুক না হয়ে পড়ে তার জন্য’ রাশিয়ার বাহিনীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে নেয় বলে জানিয়েছে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড।  

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ‘সিরিয়ার জান্তা বাহিনী, রাশিয়ার বাহিনী বা জান্তাপন্থি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করতে চায় না’ কিন্তু অংশীদার বাহিনীকে যে কোনো হুমকি থেকে ‘রক্ষা করতে ও আত্মরক্ষা করতে’ দ্বিধা করবে না বলে জানিয়েছে।

সম্প্রতি উত্তর সিরিয়া ও দেশটির রাক্কা প্রদেশে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহী বাহিনীগুলো আইএসের তথাকথিত রাজধানী রাক্কা শহর ঘিরে ফেলেছে এবং জঙ্গিদের হাত থেকে কয়েকটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।  

অপরদিকে সিরিয়ার সেনাবাহিনী আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলীয় গ্রামীণ এলাকাগুলোতে পশ্চাৎপসারণরত আইএস জঙ্গিদের কাছ থেকে বিভিন্ন এলাকা পুনরুদ্ধার করছে। ওই সেনাবাহিনী এখন রাক্কা প্রদেশে প্রবেশ করে আইএসের কাছ থেকে বেশ কিছু তেলক্ষেত্র ও গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে। যে এলাকাগুলো গত তিন বছর ধরে জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

রাক্কা অভিযানকে কেন্দ্র করে এই দুপক্ষের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।