লন্ডনে মসজিদের সামনে ভিড়ের ওপর ভ্যান, একজনের মৃত্যু

লন্ডনের একটি মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় ভিড়ের মধ্যে একটি ভ্যান ‘উঠিয়ে দেওয়ার’ ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও অন্তত দশ জন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2017, 03:30 AM
Updated : 19 June 2017, 07:41 PM

বিবিসি জানিয়েছে, রোববার মধ্যরাতে উত্তর লন্ডনের সেভেন সিস্টার্স রোডের ফিন্সবুরি পার্ক মসজিদের কাছে এ ঘটনা ঘটে। এটি ব্রিটেনের অন্যতম বড় মসজিদ। 

এ ঘটনাকে একটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বিবেচনা করেছে লন্ডন পুলিশ। নিন্দা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে।

ঘটনার পরপরই ভ্যানচালককে আটক করে পুলিশে দেয় জনতা। ৪৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম ড্যারেন ওসবোর্ন এবং তিনি ওয়েলসের বাসিন্দা বলে ডেইলি মেইল জানিয়েছে। তিনি একাই এই হামলায় ছিলেন বলে পুলিশের ধারণা।

আবদুল রহমান নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন, ওই ভ্যানের চালক চিৎকার করে বলছিলেন- ‘সব মুসলমানকে মেরে ফেল’।

বয়স্ক এক লোক অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে তাকে ঘিরে পথচারীরা যখন সুশ্রুষা করছিলেন, তখনই ওই ভ্যান ভিড়ের মধ্যে উঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। গাড়ির ধাক্কার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে কি না- সে বিষয়টি স্পষ্ট নিয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

মৃত ব্যক্তি বাংলাদেশি বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে খবর ছড়ালেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) বলছে, পরিকল্পিতভাবে ওই ভ্যানটি মুসল্লিদের ওপর তুলে দেওয়া হয়। সে সময় নামাজ শেষে অনেকে মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন।

ওই মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদ জনতার রোষ থেকে উদ্ধার করে হামলাকারী ওসবোর্নকে পুলিশে তুলে দেন। এজন্য যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে এই ইমামের প্রশস্তি চলছে।

এ ঘটনাকে ‘ইসলাম ভীতির সহিংস প্রকাশ’ হিসেবে বর্ণনা করে যুক্তরাজ্যের মসজিদগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছে কাউন্সিল।

প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে এ ঘটনাকে ‘ভয়ঙ্কর’ অভিহিত করে বলেছেন, “হতাহতদের পরিবার ও ঘটনাস্থলে থাকা জরুরি বিভাগের সবার পাশে আছি আমি।”

ইন্টারনেটে আসা ভিডিওতে ঘটনাস্থলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা যায়; আহতদের সাহায্য করতে সে সময় ছুটোছুটি করছিলেন অনেকে।

রাস্তায় পড়ে থাকা এক আহত ব্যক্তির বুকে চাপ দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার (সিআরপি) চেষ্টা করতে দেখে যায় এক ব্যক্তিকে। মাথা ফেটে যাওয়া আরেকজনের মাথা কাপড় দিকে বেঁধে দিচ্ছেলেন কয়েকজন।

এগিয়ে আসা ভ্যানটির সামনে থেকে একদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কীভাবে আত্মরক্ষা করেছেন তা জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী।

তিনি বলেন, “ভ্যানটি সোজা আমাদের সবার দিকে এগিয়ে আসে। সেখানে অনেক মানুষ ছিল। আমাদের সরে যেতে বলছিল কেউ।

“খোদাকে ধন্যবাদ, আমি একদিকে সরে যেতে পেরেছিলাম। আমি একপাশে ঝাঁপিয়ে পড়ি। সবাই আঘাত পেয়েছে। সবাই অনেক আঘাত পেয়েছে। আমার চারপাশে আহতরা পড়ে ছিল।”

সেভেন সিস্টার্স রোডের বাসিন্দা এক নারী জানান, তিনি লোকজনকে ‘চিৎকার করতে ও আর্তনাদ করতে’ দেখেছেন।

তিনি বলেন, “সবাই চিৎকার করে বলছিল ‘একটি ভ্যান লোকজনকে আঘাত করেছে’।

“ফিন্সবুরি পার্ক মসজিদের বাইরে একটি সাদা ভ্যান থেমে ছিল, মনে হচ্ছিল ভ্যানটি নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে আসা লোকজনকে আঘাত করেছে।”

তাদের বাসার সামনের রাস্তাটি পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও দমকলের গাড়িতে ভরে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ওসবোর্ন কী কারণে মুসলিমদের উপর হামলা চালিয়েছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মেইল জানিয়েছে, চার সন্তানের জনক ওসবোর্নের সঙ্গে সম্প্রতি তার সঙ্গীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

ওয়েলসের কার্ডিফে থাকলেও ওসবোর্ন বেড়ে ওঠেন সমারসেটে। তার এক বোন বিবিসিকে বলেন, “যা ঘটেছে, তার জন্য আমি ভীষণ দুঃখিত।”