ম্যানচেস্টারে হামলাকারী ‘একাই ছিলেন না’

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার এরিনা কনসার্টে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ‘সম্ভবত’ একাই ছিলেন না বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আম্বার রুড।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2017, 12:55 PM
Updated : 24 May 2017, 01:38 PM

বিবিসি রেডিওতে তিনি বলেন, হামলার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে, হামলাকারী সম্ভবত একা একাজ করেনি।

পুলিশ এর আগে জানিয়েছে, হামলাকারীর নাম সালমান আবেদি। বয়স ২২ বছর।  জন্ম ম্যানচেস্টারে এবং সে লিবিয়া বংশোদ্ভূত পরিবার থেকে এসেছে।

সোমবার রাতের কনসার্ট শেষে মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী আরিয়ানার ভক্তরা চলে যেতে শুরু করার পরই আবেদি নিজেকে উড়িয়ে দেয় বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ হামলায় নিহত হয় ২২ জন এবং আহত হয় ৫৯ জন।

সালমান আবেদি একাই হামলাটি চালাননি। তার সহযোগী থাকতে পারে- এমন সন্দেহের কারণে যুক্তরাজ্যে এরই মধ্যে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনহাজার সেনা। এছাড়া হামলার ঘটনায় সালমান আবেদির ২৩ বছর বয়সী বড় ভাইকে মঙ্গলবার আটক করা হয়েছে।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রুড হামলায় আরও কেউ জড়িত থাকার ধারণা প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের দেখা আগের কিছু হামলার তুলনায় সোমবারের হামলাটি অনেক বেশি পরিশীলিত ছিল। এ থেকেই মনে হচ্ছে যে, সে (আবেদি) একাই হামলাটি চালায় নি।”

আবেদিকে পুলিশ বোমা হামলার ঘটনার আগে থেকেই চিনত বলেও জানান রুড। বিবিসি কে তিনি বলেন, আবেদি সম্প্রতি লিবিয়া থেকে ফিরে এসেছিলেন বলেই তার ধারণা।

ওদিকে, ব্রিটিশ তদন্তকারীরা এবং ফরাসি কর্তৃপক্ষ বলছে, আবেদি সম্ভবত সিরিয়াতেও গিয়েছিলেন।

কে এই আবেদি?

তার ইতিবৃত্ত বর্ণনায় বিবিসি জানিয়েছে, আবেদির বাবা-মা লিবীয়। লিবিয়া ছেড়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর ম্যানচেস্টারে আবেদির জন্ম হয়। স্যালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা করতেন তিনি।

২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সালে আবেদি ম্যানচেস্টারে ছেলেদের একটি একাডেমিতে ছিলেন। পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভাল ছিল না।

এক পর্যায়ে আবেদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনায় খারাপ করতে থাকেন এবং পড়াশুনা শেষ পর্যন্ত শেষও করেননি। ইউরোপীয় জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া তার জন্য কঠিন ছিল।

তার সাবেক এক সহপাঠী জানিয়েছে, আবেদি খুব রসিক ছিলেন। কিন্তু একইসঙ্গে তিনি ছিলেন অসহিষ্ণু। ছোটখাট বিষয় নিয়ে ভীষণ রেগে যেতেন তিনি।

২০১১ সালে স্কুল ছাড়ার আগে আবেদি অনেক বেশি ধার্মিক হয়ে পড়েছিলেন। আর এ কারণেই তিনি তার আগের সব সহপাঠীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন।

ব্রিটিশ তদন্তকারীদের দেওয়া তথ্য থেকে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আবেদির সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সম্পৃক্ততা ছিল।

মন্ত্রী বলেন, “ব্রিটিশ তদন্তকারীরা আমাদেরকে বলেছেন, “লিবিয়া বংশোদ্ভুত একজন ব্রিটিশ হঠাৎই লিবিয়া এবং সিরিয়া ভ্রমণ করে উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকেছে এবং এ হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

হামলাকারী কোনও নেটওয়ার্কের সহায়তা পেয়েছিল কিনা জানতে চাইলে ফরাসি মন্ত্রী বলেন, “সেটি এখনও জানা যায়নি। তবে সম্ভবত ছিল। আইএস এর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল সেটির প্রমাণ পাওয়া গেছে।”

আরও হামলার আশঙ্কা

ম্যানচেস্টারে হামলার ঘটনায় আরও বৃহৎ নেটওয়ার্ক জড়িত থাকতে পারে- এমন ধারণার কারণে যুক্তরাজ্যে আরও হামলা হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে।

যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতা সেকারণেই বাড়িয়ে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২০০৭ সালের জুনের পর যুক্তরাজ্যে এ পর্যায়ের সতর্কতা এবারই প্রথম জারি হয়েছে।

টিভিতে এক বক্তব্যে মে বলেছেন, “ এর মানে, আরেকটি হামলার খুবই সম্ভাবনা আছে কেবল তাই নয় বরং খুব শিগগিরই আরও হামলা হওয়ার আশঙ্কা আছে।”

তিনি জানান, জনগণের সুরক্ষায় সশস্ত্র পুলিশের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে কনসার্টের মতো অনুষ্ঠানগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরাও পাহারায় থাকবে।