দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, শনিবার ভোররাতের দিকে ওই পরীক্ষা চালানো হয়। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেটি বিস্ফোরিত হয়। গত দুই সপ্তাহে এটা উত্তর কোরিয়ার দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা যা ব্যর্থ হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের উত্তরে সাউথ পেওংগান প্রদেশের একটি সাইট থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয় বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।
নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোয় উত্তর কোরিয়ার সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া চীন এবং চীনে প্রেসিডেন্টকে ‘অসম্মান’ করেছে।
ট্রাম্পের টুইট, “উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে চীন ও চীনের খুবই সম্মানিত প্রেসিডেন্টের ইচ্ছাকে অসম্মান করেছে। যদিও আজকের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ব্যর্থ। খারাপ!”
ট্রাম্পের আমন্ত্রণে সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। সেখানে দুই নেতার মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে এবং ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্কের উন্নতি হওয়ার ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।
শির প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি ‘নিরন্তর চেষ্টা’ করে যাচ্ছেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প নিয়ে আলোচনার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা করলো বিশ্বের সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্ন কমিউনিস্ট দেশটি।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রস্তুত থাকার আভাসও দেন।
উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা এবং ক্রামগত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর কারণে কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে।
পাল্টাপাল্টি হুমকির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শক্তিপ্রদর্শনের জন্য এরই মধ্যে একটি নৌ-স্ট্রাইক গ্রুপকে কোরীয় উপদ্বীপের জলসীমায় পাঠিয়েছে। ওই গ্রুপে একটি বিমানবাহী রণতরী এবং একটি সাবমেরিন রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-স্ট্রাইক গ্রুপের সঙ্গে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও যোগ দিয়েছে এবং যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় টার্মিনাল হাই অ্যালটিটুড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) ব্যবস্থা মোতায়েনের কাজও শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিপক্ষকে থামাতে নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি এমনকি অভিযান চালানোর হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে, ক্রমাগত উসকানি মূলক আচরণ করে কোরীয় উপদ্বীপ অশান্ত করে তোলায় উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্রদেশ চীনও প্রতিবেশী দেশটির উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে।
কিন্তু কারও সতর্কবার্তায় কান না দিয়ে পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং সামরিক মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদি নিরাপত্তা পরিষদ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে বিপর্যয়কর ফলাফল নেমে আসবে।”
“কারণ, উত্তর কোরিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের মূলভূখণ্ডে আঘাত হানার সক্ষমতা অর্জন এখন হয়তো শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।”
যদিও প্রয়োজন পড়ে তবে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তি ব্যবহার করবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পূর্ণ বাস্তবায়নে নিজেদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে না বলেও অভিযোগ করেন টিলারসন।
তিনি বিশেষ করে চীনের প্রতি প্রভাব খাটিয়ে উত্তর কোরিয়ার বানিজ্য সংযোগ নিয়ন্ত্রণের কথাও বলেন।
উত্তরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, এ সমস্যা সামধানের চাবি চীনের হাতে নেই।