দ্বিতীয় দফা ভোটাভুটিতেও বিজয় প্রত্যাশী মাক্রোঁ তার অভাবিত এই ফলাফলের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন সমর্থকদের। এক বছর আগে ‘এন মার্চ’ আন্দোলন শুরুর আগে তার কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে স্মিতহাস্যে বললেন, “ব্রিজিত সব সময় আমার পাশে আছে। তার চেয়ে বড় বিষয় তাকে ছাড়া আমি আজকের আমি হয়ে উঠতে পারতাম না।”
ইংরেজদের নিস্তরঙ্গ মনকে হামেশাই আলোড়িত করা ফরাসি প্রেসিডেন্টদের প্রেম-জীবনের ঐতিহ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহালদের কাছে মাক্রোঁর সম্ভাব্য বিজয় হবে আরও চটকদার গল্পের আধার।
৬৪ বছর বয়সী মিসেস মাক্রোঁ তার স্বামীর চেয়ে ২৫ বছরের বড়। সাতজন নাতি-নাতনি তার। ১৫ বছর বয়সে প্রাইভেট স্কুলের বিবাহিত শিক্ষকের সঙ্গে মাক্রোঁর পরিচয় হয়। মাক্রোঁর বয়সী এক মেয়ে ছিল তার। এক ক্লাসেই পড়ত তারা।
ব্রিজিতের পরিবার উত্তর ফ্রান্সের আমিয়ঁ শহরের প্রসিদ্ধ চকলেট প্রস্তুতকারী ও ব্যবসায়ী। তো সেই থ্রনিউ পরিবার মাক্রোঁর সঙ্গে ব্রিজিতের সম্পর্ক তখনি মেনে নেয়নি। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে স্থানীয় এক সাংবাদিক ব্রিটিশ পত্রিকা ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, সেই প্রেম পুরো ‘কেচ্ছাকাহিনী’র জন্ম দেয়।
এখন পর্যন্ত যতটুক জানা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে এলিসি প্রাসাদের বর্তমান অধিপতি ফ্রাঁসোয়া অলন্দের কাহিনীকে হারাতেই বেগ পেতে হবে মাক্রোঁকে। অলন্দ তার রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে যতটা না সাফল্য পেয়েছেন তার চেয়ে মুখরোচক হয়েছেন ১৭ বছরের ছোট এক অভিনেত্রীর বাসায় যাওয়ার আলোকচিত্র হয়ে। হেলমেটের আড়ালে অলন্দের লুকানো সেই মুখ মুখে মুখে ফিরেছে সবার।
তারপরও ফরাসিদের কাছে অলন্দ মশিয়ো নরমাল। ফরাসি প্রেক্ষাপটে খানিকটা স্বাভাবিকই ধরা যায়। কারণ নারীঘেঁষা হিসেবে অলন্দের সুনাম আর দুর্নাম যা-ই বলুন ভ্যালের্হি গিসকা দিজতার ধারে কাছেও না। ১৯৭৪ সালে নির্বাচিত হবার কিছুদিন পরই ভোরবেলা বান্ধবীকে গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দিতে গিয়ে দুধ সরবরাহকারী ভ্যানের সঙ্গে লেগে দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। বলাবাহুল্য, তার স্ত্রী বর্তমান ছিলেন তখন।
দিজতার কথা তো হলই, আসবে বিখ্যাত ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁর কথাও। ১৪ বছরের রাজত্বকালে তিনি বেশিরভাগ সন্ধ্যা-ই কাটিয়েছেন তার বান্ধবী ও তাদের গোপন সন্তানের সঙ্গে। কায়দা করে গোপনও রেখেছিলেন সেই ঘটনা।
সমাজতন্ত্রী মিতেরাঁর পর ডানপন্থি জ্যাক শিরাকও ছিলেন নারীতে সিদ্ধহস্ত। এই বিষয়ে তিনি এতটাই কুশলী ছিলেন যে, সফরসঙ্গীদের কাছে তার নামই হয়ে গিয়েছিল, ‘পাঁচ মিনিট, গোসলসহ লাগবে’।
এত সব বিখ্যাতদের ভিড়ে মাক্রোঁদের রোমান্স কাহিনী খুবই সাধারণ ও ঘরোয়া হলেও এর শুরুটা কিন্তু একদম অন্যরকম।
আমিয়ঁ শহরের জেসুইটদের প্রতিষ্ঠিত লা পর্হভিডেন্স প্রাইভেট স্কুলে তাদের পরিচয়। প্যারিস ম্যাচ সাময়িকী বলছে, বিখ্যাত ফরাসি অভিনেত্রী ব্রিজিত বার্দোর অনুকরণে চুল বাঁধতেন মিসেস মাক্রোঁ। ওই স্কুলে লাতিন, ফরাসি ও নাটকের শিক্ষক ছিলেন তিনি। চঞ্চল এই শিক্ষকের বিয়ে হয়েছিল ২০ বছর বয়সে স্থানীয় এক ব্যাংকারের সঙ্গে। মাক্রোঁ যখন তার দেখা পান তখন তার বয়স মাত্র ১৫। আন্দ্রে জিঁদের মত মহীরুহদের সাহিত্যে ডুবে থাকত বালক মাক্রোঁ।
একদিন শিক্ষক নিজেই দেখা করলেন ১৫ বছরের প্রতিভাধর বালকের সঙ্গে। মাক্রোঁ সেদিন চেক লেখক মিলান কুন্দেরার জ্যাক অ্যান্ড হিজ মাস্টার নাটকের মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছিল।
খানিকটা শরমের মাথা খেয়েই ১৫ বছরের বালক সেদিন তিন সন্তানের এক মাকে বলে বসল, তারা একসঙ্গে এদুয়ার্দো দো ফিলিপ্পোর আর্ট অব দ্যা কমেডি নাটকের কয়েকটি অংশ নতুন করে লিখতে পারে কি না।
এরপর থেকে প্রতি শুক্রবার তারা দেখা করতে লাগল। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের সীমা অতিক্রম করছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেনি।
তবে ব্রিজিত স্বীকার করেন, “একটু একটু করে তার বুদ্ধিমত্তার প্রতি আমি দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম। যদিও তার গভীরতা কত ছিল এখন বলতে পারব না।”
খালের পাড় ধরে দীর্ঘ সময় যখন দুজন হাঁটত তখন তাদের মধ্যে যেন বিদ্যুৎ খেলে যেত।
ফরাসি সাময়িকীগুলোতে ছাপা হওয়া কাহিনীগুলো পড়লে বোঝা যাবে, প্রেম জয় করে নিয়েছে সব কিছু। বিবাহিত শিক্ষক সেই কিশোরকে বলেছিলেন, তাকে ছেড়ে যেতে হবে তার, প্যারিসে গিয়ে স্কুল শেষ করতে আমিয়ঁও ছেড়ে যেতে হবে তাকে।
ব্রিজিত গত বছর প্যারিস ম্যাচকে বলেন, “১৭ বছর বয়সী ইমানুয়েল আমাকে বলেছিল, ‘তুমি যাই বল, তোমাকে আমি বিয়ে করব!”
“প্রেম সব কিছু টেনে নিল,”, তিনি বলেন, “এবং আমার ডিভোর্স হল।”
[ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট অবলম্বনে]