ভুটান পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভুটানে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এই সফরে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।

রিয়াজুল বাশারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2017, 07:02 AM
Updated : 18 April 2017, 01:37 PM

মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে ড্রুক এয়ারের একটি ফ্লাইটে শেখ হাসিনা পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে ভুটানে প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে তাকে স্বাগত জানান।

থিম্পুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত যিষ্ণু রায় চৌধুরীও এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবধর্না এবং গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়।

দুটি শিশু এ সময় শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেয়। তাকে উপহার দেওয়া হয় ভুটানের ঐতিহ্যবাহী উত্তরীয়।

এই সফরে ভুটানের রাজধানী থিম্পুর রয়্যাল ব্যাঙ্কোয়েট হলে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারস’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।

এছাড়া হেজো-তে বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিস্থাপন করবেন তিনি। সেখানে জমিটি ভুটান সরকার বাংলাদেশকে দিয়েছে।

বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা শেষে মোটর শোভাযাত্রা করে প্রধানমন্ত্রীকে থিম্পুর লো মেরিডিয়ান হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এবারে সফরে এ হোটেলেই থাকবেন তিনি।

মোটর শোভাযাত্রার সময় রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানায়।    

বিকালে প্রধানমন্ত্রীকে ভুটানের রাজকীয় প্রাসাদে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হয়। সেখানে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিল ও রানি জেটসান পেমার সঙ্গে দেখা করবেন শেখ হাসিনা।

এরপর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন শেখ হাসিনা, ভুটানের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে।

দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বাংলাদেশের নৌপথ ভুটানকে ব্যবহার করতে দেওয়া, হেজো-তে চ্যান্সেরি ভবনের জন্য বাংলাদেশকে জমি দেওয়া, কৃষি, সংস্কৃতি ও পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলোসই হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক আরও গভীর করবে।

ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের। এজন্য দেশটিতে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহও দেখানো হয়েছে ঢাকার পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে চলেছে বলে জানিয়েছেনমাহমুদ আলী।

সফরে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপালের মধ্যে স্বাক্ষরিত মোটরযান চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনার কথা রয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর শেখ হাসিনা তার সম্মানে দেওয়া রাজকীয় আপ্যায়ন হলে ভুটানের রাজার দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন।

বুধবার সকালে শেখ হাসিনা রাজকীয় আপ্যায়ন হলে সম্মানি অতিথি হিসেবে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারস’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

বিকালে শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে অটিজম ও অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্ট সমস্যার যথায সমাধানে সক্ষমতা অর্জন শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন।

ভুটান সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হযেছেন তার মেয়ে সায়মা হোসেন ওয়াজেদ; যিনি বাংলাদেশের জাতীয় অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন। অটিজম নিয়ে কাজের জন্য তাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ‘চ্যাম্পিয়ন’ ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বাংলাদেশ ও ভুটানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করছে। এতে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে সূচনা ফাউন্ডেশন (সাবেক গ্লোবাল অটিজম), অ্যাবিলিটি ভুটান সোসাইটি (এবিএস) ও বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া কার্যালয়।

সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘এএসডি ও অন্যান্য নিউরো ডেভেলপমেন্টাল সমস্যায় ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের জন্য কার্যকর ও টেকসই বহুমুখী কর্মসূচি’।

বুধবারই চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিস্থাপন করবেন শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার তার ফেরার কথা রয়েছে।

শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন।

এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী।