কানাডার ৫ ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

কানাডার পাঁচটি শীর্ষ ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহক প্রতারণার অভিযোগ তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে ফেডারেল সরকার।

মনজুর মাহমুদ, টরন্টো থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2017, 09:39 AM
Updated : 1 April 2017, 07:59 PM

দেশটির ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল কনজ্যুমার এজেন্সি অব কানাডার কমিশনার লুসি টেডেস্কো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।

এপ্রিলেই আর্থিক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি।

বিবৃতিতে লুসি টেডেস্কো বলেন, “অভিযোগ ওঠা ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।”

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে সিবিসি টেলিভিশনে কানাডার শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংকের তিন কর্মীর সাক্ষাৎকার থেকে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ‘গ্রাহক ঠকিয়ে’ ব্যাংকগুলোর সাফল্যের তথ্য উঠে আসে।

টিডি ট্রাস্ট ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ‘আগ্রাসী ও অবাস্তব’ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে কীভাবে গ্রাহকদের ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন সেবা গছানো হতো তা ওই ব্যাংককর্মীরা তুলে ধরেছেন।

গ্রাহকদের না জানিয়ে ওই ব্যাংক বিভিন্ন সেবার নামে ফি আদায়, ঋণের সীমা বাড়িয়ে ও প্রয়োজনীয় তথ্য না দিয়েই স্বাক্ষর নেওয়াসহ নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। 

এদের একজন বলেন, “আমি যখন কাজে আসি, আমার নৈতিকতা বোধ অনেক দূরে সরিয়ে রাখতে হয়। গ্রাহকের জন্য ভালো না এমন অনেক কিছুই আমাকে করতে হয়।”

তিন ব্যাংক কর্মীর এই সাক্ষাৎকারের পর ব্যাংক অব মন্ট্রিয়াল, রয়েল ব্যাংক অব কানাডা, কানাডিয়ান ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব কমার্স (সিআইবিসি) ও নোভা স্কশিয়া ব্যাংকের হাজারখানেক কর্মীও সিবিসি টেলিভিশনকে ইমেইলের মাধ্যমে ‘একই রকম অভিজ্ঞতার’ কথা জানান।

তাদের ভাষ্য, অনৈতিকভাবে হলেও ‘লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে কীনা’ তা সাপ্তাহিক, দৈনিক, এমনকী ঘণ্টায় ঘণ্টায় তদারকি করেন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তারা।

‘চাকরি বাঁচাতে এসব করা ছাড়া’ তাদের সামনে অন্য কোনো বিকল্পও নেই বলে জানান ব্যাংককর্মীরা। এভাবেই অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও ব্যাংকগুলোর লাভ উঠে আসছে বলে দাবি তাদের।

কানাডার দ্য স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে ব্যাংক অফ মন্ট্রিয়ল তাদের মুনাফার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়।

একই সময়ে রয়েল ব্যাংক অফ কানাডার মুনাফা বেড়েছে ২৪ শতাংশ, সিআইবিসির ১৩ শতাংশ এবং টিডি ট্রাস্ট ব্যাংকের মুনাফা ৪ শতাংশ বেড়েছে।

কানাডার আইন অনুযায়ী, কোনো সেবা বিক্রি বা ঋণসীমা বাড়ানোর আগে খরচ ও নিয়মকানুন সম্পর্কে গ্রাহকদের অবহিত করে অনুমতি ও স্বাক্ষর নেওয়া বাধ্যতামূলক।

এগুলো না করেই ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে তাদের সাফল্য ধরে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত বছর অন্টারিও সিকিউরিটিজ কমিশনকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে ১৪ বছর ধরে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি হিসেবে ৭৩ মিলিয়ন ডলার আদায়ের কথা স্বীকার করেছে সিআইবিসি ব্যাংক।

নোভা স্কশিয়া ব্যাংকও একইভাবে ২০ মিলিয়ন ডলার আয়ের কথা স্বীকার করে।

এরপর পাঁচ ব্যাংকের হাজারো কর্মীর ইমেইল নিয়ে সিবিসি আরেকটি প্রতিবেদন সম্প্রচার করলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা এবং তাদের স্বচ্ছতা খতিয়ে দেখতে সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবি ওঠে।

এরপর ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফাইনান্সিয়াল কনজ্যুমার এজেন্সি অব কানাডা গ্রাহক ঠকানোর গুরুতর অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরুর কথা জানায়।

ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে অবশ্য এ সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

তবে কানাডা ট্রাস্ট ব্যাংক এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বাইরের একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ভারত মাস্রানি ৩০ মার্চ এক সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত হতে তিনি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় কর্মরতদের সাথে কথা বলছেন। ব্যাংক কর্মীরা এ ধরনের কয়েকশ অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেছে, কিছু কিছু বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কানাডা ব্যাংক সমিতির সভাপতি টেরি ক্যাম্পবেল এক বিবৃতিতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার পর্যালোচনার কাজে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।