লন্ডনে হামলাকারীর জন্মনাম ছিল অ্যাড্রিয়ান রাসেল অ্যাজোয়া

লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে হামলাকারী খালিদ মাসুদের জন্মনাম অ্যাড্রিয়ান রাসেল অ্যাজোয়া ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2017, 12:37 PM
Updated : 24 March 2017, 12:58 PM

তার জন্ম লন্ডনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কেন্ট-এ ১৯৬৪ সালের বড়দিনে।

‘দ্য ডেইলি মেইল’ পত্রিকা বলছে, জন্মের সময় মাসুদের নাম ছিল অ্যাড্রিয়ান এলমস। ইংল্যান্ডের সাউথ কোস্টে রায় শহরে একা মায়ের লালন-পালনেই বড় হন তিনি। পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম বদলে ফেলেন।

অন্য কয়েকটি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, মাসুদ একসময় শিক্ষকতা করতেন এবং তিনি ছিলেন তিন সন্তানের জনক।

ধর্মান্তর করে মুসলমান হওয়া খালিদ মাসুদ কিভাবে জঙ্গিবাদে ঝুঁকলেন সে বিষয়টিই পুলিশ এ মুহূর্তে খতিয়ে দেখছে।  তিনি কোনও সম্প্রদায় থেকে উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকেছিলেন কিনা কিংবা বিদেশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন নাকি অনলাইন প্রচার থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লন্ডন পুলিশের এসিসটেন্ট ডেপুটি কমিশনার মার্ক রাউলি।

তার সম্পর্কে পুলিশ আরও তথ্য আহ্বান করেছে। মাসুদ কার কার সঙ্গে মিশতেন এবং সাম্প্রতিক দিগুলোতে কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন সে সম্পর্কে পুলিশ তথ্য চায় বলে জানান রাউলি।

বুধবার  লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার সেতুতে পথচারীদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে গিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে ছুরি নিয়ে হামলা চালান মাসুদ। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।

এ হামলার ঘটনা ঘটানোর আগে গোয়েন্দাদের চোখে মাসুদ ছিলেন ছোটখাট অপরাধী, বড় কোনও হুমকি নন। সেকারণে সাম্প্রতিক গোয়েন্দা নজরদারিতেও ছিলেন না তিনি।

অতীত কয়েকটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে মাসুদ ব্রিটিশ নিরাপত্তা সংস্থা এমআইফাইভ এর নজরে পড়েছিলেন। তার সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টি আঁচ করা গেলেও কোন জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে তার কি ধরনের যোগাযোগ ছিল তা স্পষ্ট জানা যায়নি। ইসলামিক স্টেট (আইএস) তাকে নিজেদের সৈনিক বলে দাবি করলেও দলটির সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল কিনা তা জানায়নি।

জঙ্গিবাদে যোগ দিতে ইচ্ছুক লোকজনদের সঙ্গে মাসুদের মেলামেশা থাকলেও তিনি নিজে কখনও জিহাদি দলে যোগ দেননি। তাছাড়া, অনেকগুলো ছদ্মনাম নিয়ে মাসুদ একাধিক অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেও সন্ত্রাসের কোনও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ছিল না।

২০০৫ সালে লন্ডনে বোমা হামলার পর এবার পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে এত বড় ধরনের হামলায় মাসুদকে কেউ সহযোগিতা করেছে কিনা, তার উদ্দেশ্য কি ছিল এবং কিভাবে তিনি প্রস্তুতি নিলেন সে সবকিছুরই তদন্ত চলছে। তিনি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে একাজ করেছেন বলেই এখন পর্যন্ত ধারণা পুলিশের।

হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত আটক হওয়া ৯ জনকে জিজ্ঞেসাবাদের মধ্য দিয়ে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে পুলিশ আশা করছে।

ইংল্যান্ডের অনেক জায়গাতেই থেকেছিলেন মাসুদ। তবে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে তিনি বার্মিংহামে ছিলেন। প্রতিবেশীরা তার ৫/৬ বছর বয়সী সন্তান এবং এক এশীয় নারীকে তার সঙ্গে বাস করতে দেখার কথা জানিয়েছে। ডিসেম্বর থেকে হঠাৎ করেই মাসুদকে আর দেখা যায়নি বলে জানায় তারা।

গবেষণা থেকে দেখা গেছে, বার্মিংহামে ব্রিটিশ ইসলামপন্থিরা বেড়ে উঠছে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে সন্ত্রাসী হামলায় দোষী সাব্যস্ত ২৬৯ জনের মধ্যে ৩৯ জনই বার্মিংহামের।

এ শহরটিতে আছে ২ লাখ ১৩ হাজারের বেশি মুসলিম। মাসুদ হামলায় যে গাড়িটি ব্যবহার করেছিলেন সেটিও বার্মিংহামে এন্টারপ্রাইজ রেন্ট-এ-কারের স্প্রিং হিল শাখা থেকে ভাড়া করা হয়েছিল।