লন্ডন হামলা: সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বনেতাদের সংহতি প্রকাশ

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে হামলার পর সমবেদনা জানানোর পাশপাশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাজ্যের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2017, 05:02 AM
Updated : 24 March 2017, 06:58 AM

লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার সেতুতে বুধবার এক হামলাকারী পথচারীদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়ে পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং ছুরিহাতে নিরাপত্তাকর্মীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় গাড়ি চাপা পড়ে আয়শা ফ্রেড নামে এক নারী এবং যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটক কার্ট কোচরান (৫৪) মারা যান। ছুরিকাঘাতে নিহত পুলিশ কর্মকর্তার নাম কিথ পামার।

হামলায় আহত ৭৫ বছরের আরেক ব্যক্তি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হামলাকারী খালিদ মাসুদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় যুক্তরাজ্যকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া প্রস্তাব দিয়েছে জার্মানি ও ফ্রান্স।

গত বছর জার্মানি ও ফ্রান্সে প্রায় একই ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দ যুক্তরাজ্যের জনগণের প্রতি ‘সংহতি’ প্রকাশ করে বলেন, “সন্ত্রাসবাদ আমাদের সবার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্রান্স জানে আজ যুক্তরাজ্যের জনগণকে কতটা কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।”

নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার মধ্যরাতে (জিএমটি ২৩:০০) প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের সব বাতি নিভিয়ে দেওয়া হয়।

জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল বলেন, “আমাদের ব্রিটিশ বন্ধু এবং লন্ডনের সমস্ত বাসিন্দাদের প্রতি আমার সমোবেদনা প্রকাশ করছি।”

“জার্মানির সব মানুষের পক্ষ থেকে আমি বলতে চাই: সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা দৃঢ় এবং অবিচলভাবে যুক্তরাজ্যের পাশে আছি।”

বিবিসি জানায়, বুধবারের হামলার পর ‍যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে কে ফোন করে সমবেদনা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নেওয়া তিনি যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশংসাও করেছেন।

হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হামলার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে যুক্তরাজ্য সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা এবং সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

এক টুইটে বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল বলেন, “শোকাহত ওইসব মানুষ এবং লন্ডনে হামলার শিকার সবার প্রতি আমাদের সমবেদনা। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাজ্যের পাশে আছে বেলজিয়াম।”

এক বিবৃতিতে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ-ক্লদ ইয়োঙ্কার বলেন, “ব্রাসেলস ও বেলজিয়ামের জনগণও একই কষ্ট ভোগ করেছে এবং আপনাদের প্রতি সমবেদনা ও সমর্থন জানাচ্ছে।”

টেলিগ্রামে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও হতাহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বিশ্বনেতাদের একজোট হয়ে কাজ করার কথা বলেন।

কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, নেদারল্যান্ডস, স্পেন এবং তুরস্কের পক্ষ থেকেও সমবেদনা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

তবে এ হমলার পর শুধু সমবেদনা বা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার কথাই বলা হয়নি।

বরং অনেক নেতা অভিবাসী বিশেষ করে মুসলিম অভিবাসী নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

তাদের একজন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বেয়াতা সিদলো বলেন, লন্ডন হামলা আমাদের শরণার্থীদের আশ্রয় না দেওয়ার নীতি ‘সঠিক ছিল’ বলে প্রমাণ করেছে।

“ইউরোপে আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়: সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে অভিবাসন নীতিকে এক করে ফেলবেন না। কিন্তু এ দুটোকে এক না ভাবা অসম্ভব।”