বুধবার দুপুরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্সের অধিবেশন চলাকালে এই ঘটনায় হামলাকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
বিবিসি জানায়, ওয়েস্টমিনস্টার সেতুতে স্থানীয় সময় বেলা ২টা ৪০ এ পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে হামলার শুরু। সেখানে গাড়ি চাপায় তিনজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন।
এরপর ওই গাড়ি পথচারীদের ধাক্কা দিয়ে পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণের রেলিংয়ে ধাক্কা খায়। সেখানে ধূসর রঙের হুন্দাই গাড়িটি থেকে ছুরি হাতে এক লোক বেরিয়ে আসে এবং দৌঁড়ে পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে ঢোকার সময় এক পুলিশের সামনে পড়ে।
নিরস্ত্র ওই পুলিশ কর্মকর্তা বাধা দিলে তাকে ছুরি মারে হামলাকারী। এতে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। এরপর সাধারণ পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্যদের গুলিতে নিহত হয় ওই হামলাকারী। পুলিশ তার নাম প্রকাশ করেনি।
বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো পাঁচজন নিহতের খবর দিলেও পরে ওই তথ্য সংশোধন করা হয়।
ঘটনার সময় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের অধিবেশন চলছিল এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
হামলার নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনাকে ‘অসুস্থ ও নীতিহীন’ বলে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মে।
ওইদিন সন্ধ্যায় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে নিজের কার্যালয়ের সামনে এক বিবৃতিতে মে বলেন, “যেখানে হামলা চালানো হয়েছে তা কোনো দুর্ঘটনা নয়। সন্ত্রাসীরা আঘাত করার জন্য আমাদের রাজধানীর মর্মস্থল বেছে নিয়েছে, যেখানে সব জাতীর, ধর্মের ও সংস্কৃতির মানুষজন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও অবাধ মত প্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধা উৎযাপন করতে সমবেত হয়।”
সহিংসতা দিয়ে এই মূল্যবোধকে পরাজিত করার যে কোনো উদ্যোগ ‘ব্যর্থ’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন মে।
ব্রিটেনের কাউন্টার-টেরোরিজমের শীর্ষ কর্মকর্তা মার্ক রাওলি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ ঘটনাকে ইসলামপন্থিদের কারও হামলা হিসেবে ধরে নিয়ে পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে।
২০০৫ সালের জুলাইয়ে লন্ডনে কট্টর ইসলামপন্থি চার সন্ত্রাসীর হামলায় ৫২ জন নিহত হয়েছিল। ওই হামলার পর এটিই শহরটিতে চালানো সবচেয়ে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা।
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে কট্টর ইসলামপন্থি জঙ্গিদের হামলায় ৩২ জন নিহত হওয়ার প্রথম বছর পূর্তির দিনে লন্ডনে এ হামলাটি চালানো হল।
হামলার সময় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ভিতরে থাকা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিকরা বিকট শব্দ শোনেন এবং এর কিছুক্ষণ পর ছুরি হাতে এক ব্যক্তিকে দেখেন। তারা ছুরিকাহত পুলিশ কর্মকর্তাকেও পার্লামেন্টের গেটের ভিতরে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তারা নাম কিথ পামার। ৪৮ বছর বয়সী পামার ১৫ বছর ধরে পুলিশের চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন।
রয়টার্সের এক আলোকচিত্রীর তোলা ছবিতে ওয়েস্টমিনস্টার সেতুতে ডজনখানেক লোককে পড়ে থাকতে দেখা যায়, যাদের মধ্যে কয়েকজনের শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আরেক নারী পড়ে ছিলেন একটি বাসের নিচে।
গাড়িটি পথচারীদের মাড়িয়ে যাওয়ার সময় সেতু থেকে টেমস নদীতে পড়ে যান এক নারী। পরে তাকে আহত অবস্থায় নদী থেকে উদ্ধার করা হয়।
ফরাসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী তিন ফরাসি স্কুল শিক্ষার্থীও রয়েছেন।
ঘটনার পরপরই পার্লামেন্ট সদস্য টোবিয়াস এলউডকে দেখা যায় মুখে মুখ লাগিয়ে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে ছুরিকাহত পুলিশ সদস্য কিথ পামারকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় ওই পুলিশ সদস্যের।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান জানিয়েছেন, লন্ডনের বাসিন্দা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শহরের সড়কগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।