বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে বুধবার এক প্রতিবেদনে এ সঙ্কট মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের এ সংস্থা।
‘থার্স্টিং ফর ফিউচার: ওয়াটার অ্যান্ড চেইঞ্জিং ক্লাইমেট’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ আর পানির অতি ব্যবহারসহ নানা কারণে সুপেয় পানির উৎস কমে যাচ্ছে।
এর ফলে ২০৪০ সাল নাগাদ প্রায় ৬০ কোটি শিশুর বসবাসের এলাকায় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দেবে;তাতে তাদের জীবনধারণ ও সুস্থতা হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ইউনিসেফ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পানিসঙ্কটে বেশি ভুগবে দরিদ্র শিশুরা।
এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক এক বিবৃতিতে বলেন, “পানি হচ্ছে মৌলিক উপাদান। এটা ছাড়া কোনো কিছুই বেড়ে ওঠে না। কিন্তু বিশ্বজুড়ে আজ কোটি কোটি শিশু সুপেয় পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত, যা তাদের জীবনকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে; ক্ষতিগ্রস্ত করছে স্বাস্থ্য; বিপন্ন করছে ভবিষ্যৎকে। এই সঙ্কট বাড়তেই থাকবে যদি না আমরা সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে নামি।”
পাশাপাশি উষ্ণ আবহাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা, খরা এবং বরফ গলে যওয়ার মত ঘটনায় সুপেয় পানির প্রাপ্যতা, মান ও পয়ঃনিস্কাশনে প্রভাব ফেলছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পানির নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার এবং শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন।
পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ ও সংঘাতও নিরাপদ পানির অধিকার থেকে শিশুদের বঞ্চিত করছে।
বাধ্য হয়ে দূষিত পানি ব্যবহার করায় শিশুরা ডায়রিয়া ও কলেরার মত প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে।
সেখানে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি এতোটাই কঠিন হয়ে উঠেছে যে, খরাপ্রবণ এলাকার অনেক শিশু প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা ব্যয় করছে পানি সংগ্রহের কাজে। হুমকির মুখে পড়ছে তাদের শিক্ষাজীবন। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে কন্যাশিশুরা।
ইউনিসেফ বলছে, সুপেয় পানির উৎস এখনো বিশ্বের ৬৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষের নাগালের বাইরে; খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করে এখনো প্রায় ৯৪ কোটি ৬০ লাখ মানুষ।
শিশুদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমিয়ে সুপেয় পানি তাদের নাগালের মধ্যে আনতে অনেকগুলো সুপারিশ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
আগামী বছরগুলোতে পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকারগুলোর কার্যকর পরিকল্পনা নেওয়ার তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি সবচেয়ে ঝুকিতে থাকা শিশুদের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেখানে।
পাশাপাশি উচ্চ-ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় নিয়ে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন নীতি, ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের সব পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির বিষয়টি যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।
সেই সঙ্গে পানির উৎস সংরক্ষণের বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে হবে এবং নিরাপদ পানি সংরক্ষণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
“পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের কাছে পৌঁছাতে আমাদেরও কাজের ধরন বদলাতে হবে। তাদের জন্য নিরাপদ পানির অধিকার নিশ্চিত করা হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর উপায়,” বলেন অ্যান্থনি লেক।