ফ্লাইটে ইলেকট্রনিক্স বহনে কড়াকড়ি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি দেশের বিমানবন্দর থেকে আসা যাত্রীদের বিমানের কেবিনে মোবাইল থেকে বড় আকারের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশি যাত্রীদের ওপর।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2017, 11:18 AM
Updated : 22 March 2017, 02:56 AM

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ওই সব বিমানবন্দর থেকে আসা যাত্রীরা ট্যাবলেট, পোর্টেবল ডিভিডি প্লেয়ার, ল্যাপটপ, আইপ্যাড ও ক্যামেরার মতো বড় আকারের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিমানের মূল কেবিনে আনতে পারবেন না। সেগুলো ‘চেকড ব্যাগেজে’ দিতে হবে।

একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র এক মুখপাত্র বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশ থেকে আসা ফ্লাইটের মূল কেবিনে ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ন্ত্রিত হবে।  

সন্ত্রাসীরা ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রে লুকানো বোমা ব্যবহার করে উড়োজাহাজে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা করছে এমন তথ্য আসার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমন বিষয়ক এক কর্মকর্তা বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে দেখা গেছে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিমান পরিবহন খাতে হামলা চালানোর চেষ্টা খুব বেড়ে গেছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আটটি দেশের দশটি বিমানবন্দরকে কেন্দ্রে করে ফ্লাইট পরিচালনা করে এমন নয়টি বিমান পরিবহন সংস্থার ওপর সরাসরি এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় যারা ওই এয়ারলাইন্সগুলো ব্যবহার করবেন, তাদেরও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে হবে। 

 

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোনের চেয়ে বড় যে কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে এবং তা কার্যকর করতে মঙ্গলবার গ্রিনিচ মিন টাইম সকাল ৭টা থেকে ৯৬ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোকে।  

তবে অনুমোদিত চিকিৎসা যন্ত্রপাতি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় যেসব বিমানবন্দর

>> কুইন আলিয়া ইন্টারন্যাশনাল, আম্মান, জর্ডান

>> কায়রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, মিশর

>> আতাতুর্ক বিমানবন্দর, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক

>> কিং আবদুলআজিজ ইন্টারন্যাশনাল, জেদ্দাহ, সৌদি আরব

>> কিং খালিদ ইন্টারন্যাশনাল, রিয়াদ, সৌদি আরব

>> কুয়েত ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট

>>  মোহাম্মেদ ভি ইন্টারন্যাশনাল, কাসাব্লাংকা, মরোক্কো

>> হামাদ ইন্টারন্যাশনাল, দোহা, কাতার

>> দুবাই ইন্টারন্যাশনাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত

>> আবু ধাবি ইন্টারন্যাশনাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত

এতে যেসব এয়ারলাইন্স সরাসরি প্রভাবিত হবে

>> রয়্যাল জর্ডানিয়ান

>> ইজিপ্ট এয়ার

>> টার্কিশ এয়ারলাইন্স

>> সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স

>> কুয়েত এয়ারওয়েজ

>> রয়্যাল এয়র মারক

>> কাতার এয়ারওয়েজ

>> এমিরেটস

>> ইতিহাদ এয়ারওয়েজ

যুক্তরাজ্য বলছে, তুরস্ক, লেবানন, জর্ডান, মিশর, তিউনিসিয়া ও সৌদি আরব থেকে সরাসরি ফ্লাইটের মূল কেবিনে স্মার্টফোনের চেয়ে বড় ডিভাইস বহন করা যাবে না।

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইজিজেট, জেট২, মোনার্ক, টমাস কুক, টমসন, অ্যাটলাস-গ্লোবাল, পেগাসাস, ইজিপ্ট এয়ার, রয়্যাল জর্ডানিয়ান, মিডল ইস্ট এয়ারলাইন্স, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স, টার্কিশ এয়ারলাইন্স ও তিউনিসায়ার-এর ফ্লাইটে এর প্রভাব পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের এক সহযোগীর বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সেক্রেটারি জন কেলি যেসব নিরাপত্তা ইস্যুতে ভ্রমণে ইলেকট্রনিক্স বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা ব্যাখ্যার জন্য কংগ্রেস সদস্যদের সপ্তাহজুড়ে তাগাদা দিয়েছেন বলে শোনা গেছে।

ওই প্রতিবেদনে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ার রাজধানীর মগাদিসু থেকে উড্ডয়নের অল্প সময়ের মধ্যে বিস্ফোরণে দুবাইভিত্তিক এয়ারলাইনস দালাওয়ের একটি উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা তুলে ধরেন বিবিসির উত্তর আমেরিকা প্রতিনিধি জেমস কুক।

ওই ঘটনার তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে তিনি বলছেন, বিস্ফোরণের পর ওই উড়োজাহাজ থেকে এক যাত্রীর মৃতদেহ বের করা হয়, যিনি একটি ল্যাপটপ বোমা বহন করছিলেন। পাইলট কোনোভাবে অবতরণ করতে পেরেছিলেন; ওই বিস্ফোরণে একমাত্র নিহত ব্যক্তি ছিলেন ওই বোমাবাজ।

সর্বোচ্চ উচ্চতায় গিয়ে ওই ল্যাপটপ বিস্ফোরিত হলে উড়োহাজাজটি নিশ্চিতভাবেই ধ্বংস হতে পারত বলছেন কুক।

বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জঙ্গি গোষ্ঠী আল শাবাব দায় স্বীকার করেছিল জানিয়ে তিনি বলছেন, ফের ওই ধরনের হামলার সম্ভাবনা আপাতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের বর্তমানের উদ্বেগ।

বিবিসির ওই উত্তর আমেরিকা প্রতিনিধি বলছেন, “কিন্তু সব সময়ের মতো ইন্টেলিজেন্সের বিষয় দেখিয়ে কেন এই নিষেধাজ্ঞা, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা অনীহা দেখিয়েছেন।”