তুর্কি পত্রিকায় মেরকেলকে হিটলার রূপে চিত্রায়ন

কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে তুরস্কের সরকারঘনিষ্ঠ একটি সংবাদপত্রে আঙ্গেলা মেরকেলের বিকৃত একটি ছবি ঘিরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2017, 09:32 AM
Updated : 19 March 2017, 02:33 AM

ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, জার্মান চ্যান্সেলর মেরকেল তুরস্ককে ‘নাৎসিদের নিয়ে তুলনা দেওয়া’ বন্ধ করতে আহ্বান জানানোর প্রতিক্রিয়ায় ডানপন্থি ট্যাবলয়েড সান তাদের শুক্রবারের সংখ্যায় হিটলারবেশী মেরকেলের ওই ছবি ছাপে।

প্রথম পাতায় প্রকাশিত ছবিটিতে মেরকেলকে পরানো হয়েছে নাৎসি সামরিক পোশাক; গলায় আর বাম হাতের বাহুতে স্বস্তিকা চিহ্ন, ডানহাতে পিস্তল।

মের্কেলের মুখেও লাগানো হয়েছে হিটলারের ‘ট্রেডমার্ক’ গোঁফ; দাঁড়ানো হিটলারবেশী মেরকেলের পাশে আরও বড় স্বস্তিকা চিহ্ন।

এরপরও যদি কারও বুঝতে বাকি থাকে, তার জন্য পাশেই বড় বড় হরফে লেখা আছে ‘মিসেস হিটলার’। ছবির সঙ্গে দেওয়া নিবন্ধে মেরকেলকে বেশ কয়েকবার ‘আগলি আন্ট’ নামেও ডাকা হয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে মেরকেলের এই ছবি নতুন করে বিতর্ক উসকে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানের সমর্থনে জার্মানিতে শোভাযাত্রা বের করার অনুমতি নিয়ে ওই টানাপোড়েন শুরু হয়। শোভাযাত্রায় তুরস্কের মন্ত্রীদেরও অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

গত বছরের জুলাইয়ে ব্যর্থ ক্যু’র পর এরদোয়ানকে আরও বেশি ক্ষমতা দিয়ে সংবিধান সংশোধনে আগামী মাসে তুরস্কে হতে যাওয়া একটি গণভোটের সমর্থনে ওই শোভাযাত্রা হওয়ার কথা।

সংশোধনীটি গৃহীত হলে এরদোয়ান ২০২৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।

জার্মানিতে প্রায় ১৪ লাখ তুর্কি নাগরিকের বাস। গণভোটে তাদের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

নেদারল্যান্ডসেও একই ধরনের একটি শোভাযাত্রা করতে চেয়েছিল এরদোয়ানের সমর্থকরা। কিন্তু নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে কোনো দেশই শোভাযাত্রা করার অনুমতি দেয়নি।

এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় তুরস্কের সরকার। এরদোয়ান নেদারল্যান্ডস ও জার্মান সরকারকে ‘সন্ত্রাসবাদের’ সমর্থক অ্যাখ্যা দিয়ে অনুমতি না দেওয়াকে ‘নাৎসি’ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেন।

এরদোয়ানের ওই তুলনায় প্রতিক্রিয়ায় ফেটে পড়ে ইউরোপের দেশগুলো। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া অলন্দ তুর্কি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে ‘মেনে নেওয়া যায় না’ বলে মন্তব্য করেন।

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল

মেরকেল বলেন, “নাৎসিদের হাতে ক্ষতিগ্রস্তদের আমরা অবজ্ঞা করতে পারি না। জার্মানিকে নাৎসিবাদের সঙ্গে তুলনা করা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের তুলনা তুরস্ক ও জার্মানি এবং দুই দেশের জনগণের জন্য কখনোই কল্যাণ বয়ে আনবে না।”

সানে মেরকেলের ছবি বিকৃতভাবে প্রকাশের দুইদিন আগে জার্মানির সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া সংবাদপত্র বিল্ডের এক নিবন্ধে এরদোয়ান তার ক্ষমতালিপ্সা দিয়ে ইউরোপের স্থিতিশীলতাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করা হয়।

“বিল্ড এরদোয়ানের সত্যিকার চেহারা বলছে- সে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক নয়। সে তার দেশকে ক্ষতবিক্ষত করেছে, তাকে কোনোভাবেই এখানে স্বাগত জানানো যায় না,” জার্মান পত্রিকাটিতে এমনটাই বলা হয়।

এর পরপরই আঙ্কারার পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই নিবন্ধকে ‘মনগড়া’ এবং ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ হিসেবে অভিহিত করে।

এরই ধারাবাহিকতায় সানের শুক্রবারের সংখ্যায় দেখা মেলে হিটলাররূপী মেরকেলের। জার্মান চ্যান্সেলর তুরস্কের বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিস্ট কর্মকাণ্ডের’ নেতৃত্ব দিচ্ছেন অভিযোগ করে পত্রিকাটি বলে, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়াম এক্ষেত্রে জার্মানির পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।