নেদারল্যান্ডসে নির্বাচন: পপুলিজমের উত্থানের পদধ্বনি?

নেদারল্যান্ডসের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে জনগণ। এ বছর ইউরোজোনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের মধ্যে এটিই প্রথম নির্বাচন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2017, 03:09 PM
Updated : 16 March 2017, 09:49 AM

এ নির্বাচন এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ডানপন্থি পপুলিস্ট বা লোকরঞ্জনবাদীদের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। নির্বাচনে তারা উঠে আসতে পারে শীর্ষস্থানে।

বুধবারের এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের মধ্য-ডান ‘ফ্রিডম এন্ড ডেমোক্র্যাসি পার্টি’র (ভিভিডি) সঙ্গে ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী খেয়ার্ট ভিল্ডার্সের কট্টর-ডানপন্থি ‘পার্টি ফর ফ্রিডম’ (পিভিভি)-এর।

রুটের প্রতিপ্রক্ষ ভিল্ডার্সকে তার ইসলামবিদ্বেষ এবং অভিবাসনবিরোধিতার জন্য আদালত পর্যন্ত যেতে হলেও তার এ অবস্থান দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।

ভিল্ডার্স ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে নেদারল্যান্ডসকে বিচ্ছিন্ন করার অঙ্গীকার করছেন৷ অঙ্গীকার করেছেন সব মসজিদ বন্ধ করার পাশাপাশি কোরানও নিষিদ্ধ করার।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে অনেক মিলের কারণে ডাচ নির্বাচনে ভিল্ডার্সের উত্থানের সম্ভাবনা একটি ভিন্ন বার্তাই দিচ্ছে।

নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে অনেক আগেই পপুলিজমের প্রবণতা থামাতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তা না হলে ইউরোপে ধস নামবে বলে সতর্ক করেন তিনি। ভোটারদেরকে ভুল পথে না যাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন রুটে।

কিন্তু তার এ আহ্বানেও থেমে থাকেনি ফ্রিডম পার্টির ভিল্ডার্সের জনসমর্থন। জনমত জরিপগুলোতে এগিয়ে থেকেছে তার দল। যদিও সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে ভিল্ডার্সের দলের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই এর কারণ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপট আংশিক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, ওয়াশিংটনে যা ঘটছে সেটি দেখে অনেক ডাচ নাগরিকই হয়ত কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়েছেন।

বুধবার ডাচ প্রধানমন্ত্রী রুটে ভোট দেওয়ার পর দেশের নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কল্পনা করে দেখুন ফ্রিডম পার্টি প্রথম স্থানে উঠে আসলে বিশ্বে এর কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।

নেদারল্যান্ডসের পর মে মাসে ফ্রান্সে এবং সেপ্টেম্বরে জার্মানিতে নির্বাচন হবে। এদিক থেকে রুটে নেদারল্যান্ডসের নির্বাচনকে কোয়ার্টার ফাইনাল আখ্যা দিয়ে বলেন, মে তে ফ্রান্সের সেমি ফাইনাল আর সেপ্টেম্বরে জার্মানিতে ফাইনালের আগেই ‘পপুলিস্টদের দাপট’ থামাতে হবে৷ তা নাহলে “আমার মনে হয় ব্রেক্সিট এবং আমেরিকার নির্বাচনের পর বিশ্ব আবার আরেকটি ভুল ধরনের পপুলিজমকে আজকের দিনে জয়ী হতে দেখবে।”

ওদিকে, ভিল্ডার্স নিজের ভোট দেওয়ার পর বলেছেন, “আজকের নির্বাচনের ফল যা-ই হোক না কেন, জেনি আর বোতলে ফিরে যাবে না। আর এই দেশপ্রেমী বিপ্লব আজ কিংবা কাল যখনই হোক ঘটবেই।”

ডাচ রাজনীতিতে বিভক্তির কারণে দেশটিতে কোনও না কোনওভাবে একটি জোট সরকার হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। পপুলিস্ট পার্টির জনপ্রিয়তা বেশি থাকায় নির্বাচনে এ দলের জয়লাভের সম্ভাবনা এখনও আছে। তবে অন্যান্য আরও যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে সেগুলোও নির্বাচনে ভাল ফল করতে পারে।

এতে করে ডাচ রাজনীতি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। তবে ভিল্ডার্সের দল নির্বাচনে যত ভাল ফলই করুক কোনও বড় ধরনের রাজনৈতিক দলই তাদের সঙ্গে যোগ দিতে চাইবে না, বলছেন সংবাদদাতারা।

পপুলিজমের উত্থান নিয়ে সংশয় ছাড়াও নেদারল্যান্ডসের এবারের নির্বাচনে তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতির বিষয়টিও বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ তুরস্ক ডাচ রাষ্ট্রদূতের আঙ্কারায় ফেরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে৷