টিভি দিয়েও নজরদারি করছে সিআইএ: উইকিলিকস

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা নথিপত্র হ্যাক করে হইচই ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকস এবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর হ‌্যাকিং কৌশল ও নজরদারির পদ্ধতির বিস্তারিত তথ‌্য প্রকাশ করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2017, 06:45 AM
Updated : 8 March 2017, 06:52 AM

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিআইএ বিভিন্ন সাইবার অস্ত্র ও ম্যালওয়ার ব্যবহার করে উইন্ডোজ, অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, ওএসএক্স, লিনাক্স কম্পিউটার ও ইন্টারনেট রাউটার হ্যাক করে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে বলে উইকিলিকস দাবি করেছে।

নজরদারির এসব সফটওয়্যারের বেশিরভাগ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হলেও স্যামসাংয়ের টেলিভিশনে স্পাইওয়ার বসানোর টুলস বানাতে তারা ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ফাইভের সহায়তা নিয়েছে বলেও উইকিলিকসের ভাষ‌্য।

তারা বলছে, ‘ভল্ট সেভেন’ নামে সিআইএ-র বিস্তারিত হ্যাকিং কৌশলের প্রথমটি তারা প্রকাশ করেছে। সিআইএ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের বেশি কিছু করছে কি-না সে বিতর্ক উসকে দেওয়াই তাদের উদ্দেশ‌্য।

এসব তথ‌্যের সত‌্যতা নিয়ে কোনো মন্তব‌্য করতে রাজি হননি সিআইএ বা এমআই ফাইভের কর্মকর্তারা।

উইকিলিকসের ফঁস করা ২০১৪ সালের এক নথিতে দেখা যায়, স্যামসাংয়ের এফ৮০০ রেঞ্জের স্মার্ট টিভিগুলোকে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে ‘উইপিং অ‌্যাঞ্জেল’ কোড নামে। সেখানে এমন এক স্পাইওয়‌্যার বসানো হয়েছিল, যাতে ব‌্যবহারকারী টিভি বন্ধ করলেও আদতে তা বন্ধ হত না। স্ক্রিন অন্ধকার হয়ে ব্যবহারকারীকে ধোঁকা দিলেও আসলে তা থাকত সিআইএ-র নিয়ন্ত্রণে।

এসব টিভি আশপাশের শব্দ রেকর্ড করত; পরে টিভি আবার চালু হলে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে সেসব শব্দ সিআইয়ের সার্ভারে পাঠিয়ে দিত।

সিআইএ-র ‘ফিউচার সেকশন’ বিভাগ পরে ওই টিভিগুলো দিয়ে ব্যবহারকারীর অজান্তে ‘স্ন্যাপশট’ নেওয়ারও ব্যবস্থা করে বলে ধারণা করছে উইকিলিকস। 

তারা বলছে, সিআইএ অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বহুল ব্যবহৃত অ্যাপগুলোর নিরাপত্তা কোড বদলে দিয়েও বিস্তৃত নজরদারি চালাচ্ছে।

এসব ‘সাইবার অস্ত্রের’ কিছু বানিয়েছে সিআইএ, বেশ কিছু বানিয়েছে যুক্তরাজ্যের গভার্নমেন্ট কমিউনিকেশন হেডকোয়ার্টার্স (জিসিএইচকিউ), যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি; বাকিগুলো বানিয়েছে ‘তৃতীয় পক্ষ’।

এসব অ্যাপের মাধ্যমে স্যামসাং, এইচটিসি, সনি এবং অন্যান্য কোম্পানির বানানো যন্ত্রগুলোতে নজরদারি চালানো হয়। যার মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল, টেলিগ্রাম ও উইবুর মতো জনপ্রিয় চ্যাট অ্যাপের ম্যাসেজও সিআইএ পড়তে পারে।

আইফোন ও আইপ্যাডে নজরদারি চালাতেও সিআইএ-র একটি বিশেষ ইউনিট কাজ করে বলে উইকিলিকসের দাবি। তারা বলছে, ব্যবহারকারীদের অবস্থান জানতে, তাদের অজান্তে ফোনের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে সিআইএ-র ওই ইউনিট।

উইকিলিকস বলছে-

>> সিআইএ যানবাহনের কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ ব‌্যবস্থাও কব্জা করার চেষ্টা করেছে এবং এর মাধ‌্যমে হয়ত হত‌্যাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া সম্ভব।

>> যেসব কম্পিউটার ইন্টারনেটে যুক্ত নয়, সেগুলোতে ঢুকে পড়ার কৌশলও উদ্ভাবন করেছে সিআইএ। যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অজান্তে তার কম্পিউটারের গোপন অংশে বা ইমেজ আকারে তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব।

>> জনপ্রিয় ভাইরাসরোধী সফটওয়্যারগুলোকে আক্রান্ত করার কৌশলও সিআইএ উদ্ভাবন করেছে।

>> রাশিয়া এবং অন্যান্য জায়গা থেকে ‘চুরি করা’ ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে সিআইএ হ্যাকিং কৌশলের একটি লাইব্রেরি তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে যেসব হ্যাকার কাজ করেন, তাদের এসব টুল পাঠানো হয়; এমনকি অনেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানও অননুমোদিত উপায়ে এই কৌশল ব্যবহার করে থাকে বলে উইকিলিকসের ভাষ‌্য।    

উইকিলিকসের প্রকাশিত এসব নথিতে সিআইএ-র সংবেদনশীল কর্মকৌশলের বিস্তারিত তথ‌্য রয়েছে, যা গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতাকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

তাদের ভাষ্য, যে প্রতিষ্ঠানের কাজই হচ্ছে অন্যের গোপনীয় তথ্য চুরি করা, তারা এখন নিজেদের তথ্যই সামলাতে পারছে না।

উইকিলিকসের নতুন এ ‘ফাঁসের’ কারণে সিআইএ এতদিন যাদের উপর নজরদারি চালাচ্ছিল তারা কৌশল বদলে ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

এছাড়া সিআইএ নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে এর অপব্যবহার করছে কি-না সে বিতর্কও উঠছে।

এর আগে এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্যে একইরকম বিতর্কে পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ)।