ন্যাম খুনে যে সন্দেহভাজনদের খোঁজা হচ্ছে সে তালিকায় ওই কর্মকর্তাদের নাম আছে বলে জানিয়েছেন সিউলের দুই আইনপ্রণেতা।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের টার্মিনালে একটি ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করার সময় অসুস্থ হয়ে পরে মারা যান উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সৎভাই কিম জং- ন্যাম।
শুরুতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার কথা বলা হলেও পরে মালয়েশিয়া পুলিশ জানায়, ‘ভিএক্স নার্ভ এজেন্ট’ এর বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।
ন্যামকে দুই নারী জাতিসংঘ ঘোষিত গণবিধ্বংসী রাসায়নিক অস্ত্র ভিএক্স নার্ভ প্রয়োগ করেন। ভিয়েতনামি ও ইন্দোনেশীয় ওই দুই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের দাবি ন্যাম হত্যায় ‘চাতুর্যের সঙ্গে’ তাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে।
এই হত্যার ঘটনায় এক কূটনীতিকসহ আট উত্তর কোরীয় নাগরিককে খুঁজছে মালয়েশীয় তদন্তকারীরা। এদের মধ্যে একজন আটক হয়েছে। চারজন উত্তর কোরিয়ার পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে অপর দু’জন এখনও মালয়েশিয়ায় আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষ ন্যামের মৃত্যুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি। তবে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, দেশের শাসন ব্যবস্থায় পরিবারতন্ত্রের সমালোচনাকারী ন্যামকে উত্তর কোরিয়ার চররাই হত্যা করেছে।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ার আইনপ্রণেতা লি চিওল-উও বলেন, “এ ঘটনায় সন্দেহভাজন আট জনের মধ্যে চার জন উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের এবং দুই জন যারা মূলত অভিযান বাস্তবায়নে কাজ করেছে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মী।”
“এ কারণেই এটি একটি রাষ্ট্রপরিচালিত সন্ত্রাসী কার্মকণ্ড। যেটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি পরিচালনা করেছে।”
গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে আরেক আইনপ্রণেতা কিম বায়ুং-কি বলেছেন, উত্তর কোরীয়রা তিনটি দলে ভাগ হয়ে কাজ করেছে।
দুটো দলেই উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। তারাই ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনাম থেকে দুই নারীকে ভাড়া করে খুন করানোর জন্য মালয়েশিয়ায় নিয়ে যান। আর তৃতীয় দলটি একাজে মদদ যুগিয়েছে।
কুয়ালালামপুরের উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের কূটনীতিক হায়ন কোয়াং সং নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের হয়ে খুনের ঘটনায় মদদদানকারী দলে কাজ করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দারা এমনটিই বলছেন বলে জানিয়েছেন কিম বায়ুন-কি।
তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়ায় পুলিশ হেফাজতে থাকা উত্তর কোরীয়ও সহযোগিতাকারী দলে ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম সত্যশিব রোববার জানান, ন্যামকে খুবই উচ্চমাত্রায় এই রাসায়নিক এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, “ন্যামের মুখে ওই পদার্থ ঘষে দেওয়ার প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটে। তার শেষ মুহূর্তগুলো খুবই ‘যন্ত্রণাদায়ক’ ছিল। ক্লিনিকে তিনি অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন এবং হাসপাতালে নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স থেকে তাকে বের করার সময়ই তিনি মারা গিয়েছিলেন।”
বিশ্বের সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়ার অল্প যে কয়েকটি দেশের সু সম্পর্ক রয়েছে মালয়েশিয়া তার একটি।
কিন্তু ন্যাম হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।