স্বল্প আহারে হতে পারে ডায়বেটিসের নিরাময়

দীর্ঘ সময় প্রায় অনাহারে থাকার একটি নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা অনুসরণ করে অগ্ন্যাশয়কে পুনরায় কর্মক্ষম করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন একদল মার্কিন গবেষক। যা ডায়বেটিস আক্রান্তদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2017, 02:16 PM
Updated : 24 Feb 2017, 03:48 PM

যদিও মানবদেহের উপর এই গবেষণা ফল এখনও প্রমাণিত নয়।

গবেষকরা ইঁদুরের উপর এই ‘ফাস্টিং ডায়েট’ পরীক্ষা চালিয়ে দেখেন, এর মাধ্যমে অগ্ন্যাশয়ে থাকা একটি বিশেষ কোষ যেটা ‘বেটা সেল’ নামে পরিচিত, পুনরায় কর্মক্ষম হয়ে উঠে।

বেটা সেল রক্তে চিনি সনাক্ত করে এবং যখন রক্তে চিনির পরিমান বেড়ে যায় তখন বেটা সেল ইনসুলিন নির্গত করে তা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নামিয়ে আনে।

গবেষকরা বলেন, এই গবেষণা প্রতিবেদন ‘নিশ্চিতভাবেই খুবই চমৎকার’। কারণ এটা ডায়বেটিসের চিকিৎসায় নতুন এক উপায় হয়ে উঠতে পারে।

গবেষণাগারে ইঁদুরকে ‘ফাস্টিং-মিমিকিং ডায়েট’ দেওয়া হয়। যা অনেকটা ভেগান বা নিরামিষভোজীদের খাদ্য তালিকার মত।

‘ফাস্টিং-মিমিকিং ডায়েট’ অনুরণ করে ভেগানরা দিনে ৮০০ থেকে ১১০০ ক্যালরির বেশি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। তাদের খাবার তালিকায় থাকে বাদাম ও স্যুপ।

পাঁচদিন এভাবে খাবার গ্রহণের পর বাকি ২৫ দিন তারা যা খুশি তা খান।

পূর্ববর্তী কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতি অনুসরণ করে শরীরের বয়স বৃদ্ধির গতিও কমিয়ে দেওয়া সম্ভব।

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ডাঃ ভল্টার লনগো বলেন, “আমরা প্রথমে ইঁদুরকে প্রচণ্ড অনাহারে রেখেছি এবং পরে তাদের খাবার দিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা দেখেছি, অগ্ন্যাশয়ের কোষে বেশকিছু পরিবর্তনের দ্বারা সেটি পুনরায় কর্মক্ষম হয়ে উঠে। এই পুনঃকর্মক্ষম হওয়ার প্রক্রিয়ায় অগ্ন্যাশয়ের অচল হয়ে পড়া অংশ পুনরায় কাজ করতে শুরু করে।”

এই উদ্ভাবন টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু উভয় ধরণের ডায়বেটিসের ক্ষেত্রেই সুফল বলে আনবে বলে আশা প্রকাশ করেন গবেষকরা।

টাইপ ওয়ান ডাইবেটিসের ক্ষেত্রে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) বেটা সেল ধ্বংস করে ফেলে।

আর জীবনযাত্রার কারণে এবং শরীর যখন ইনসুলিনে আর সাড়া দেয় না তখন সেটাকে টাইপ টু ডাইবেটিস বলে।

বিবিসির প্রতিবেদক পিটার বোউইস এ বিষয়ে ডাঃ লনগোর চালানো একটি পরীক্ষা অংশ নেন।

তিনি বলেন, “পাঁচ দিনের ফাস্টিং সাইকেলে আমি গড়ে একজনের স্বাভাবিক খাবারের চারভাগের একভাগ খেয়েছি। এ সময় আমার দুই থেকে চার কেজি ওজন কমেছে।” 

“পরবর্তী ফাস্টিং সাইকেলে যাওয়ার আগের ২৫ দিন আমি স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করেছি এবং আমি প্রায় আমার আগের ওজনে ফিরে গেছি।”

তবে ডাঃ লনগো এখনই লোকজনকে বাড়িতে এই পদ্ধতি অনুসরণ না করার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, “মোট কথা এখনও বাড়িতে এই চেষ্টা করার সময় আসেনি। মানুষ যা ভাবছে এটা তার চেয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর।”

দ্য জার্নাল সেল এ এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ পায়। সেখানে বলা হয়, এই ডায়েট শরীরকে পুনরায় সচল করে তোলে।