লন্ডন পুলিশের নেতৃত্বে প্রথম নারী

সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে পরিচিত পাওয়া ক্রেসিডা ডিককে লন্ডন পুলিশের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2017, 07:13 AM
Updated : 23 Feb 2017, 07:13 AM

রয়টার্স জানিয়েছে, লন্ডন পুলিশের ১৮৮ বছরের ইতিহাসে ৫৬ বছর বয়সী ডিক-ই প্রথম নারী প্রধান। তিনি বার্নার্ড হোগান-হোর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। পাঁচ বছর স্কটল‌্যান্ড ইয়ার্ডে দায়িত্ব পালনের পর এ মাসেই দায়িত্ব ছেড়েছেন হোগান।

দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন কমিশনার ক্রেসিডা ডিক বলেন, “আমি শিহরিত, সম্মানিত বোধ করছি। এটি একটি মহান দায়িত্ব, একটি অসাধারণ সুযোগ।”

অক্সফোর্ড থেকে ডিগ্রি নেওয়া ডিক ১৯৮৩ সালে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে যোগ দেন কনস্টেবল পদে। ২০১৫ সালে পররাষ্ট্র বিভাগে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি লন্ডন ও অক্সফোর্ড পুলিশের বিভিন্ন পদে ছিলেন।

নতুন দায়িত্বে তাকে লন্ডন পুলিশের প্রায় ৪৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সামলাতে হবে, যাদের জন্য বার্ষিক বরাদ্দ তিনশ কোটি পাউন্ডের বেশি। অবশ‌্য এই বরাদ্দ ‘অপর্যাপ্ত’ বলে মনে করেন অনেকে।

অবসরে যাওয়ার আগে শেষ বক্তৃতায় বিদায়ী পুলিশ কমিশনার হোগানও বলেছেন, বাজেটের চাপ সামলাতে সামনের দিনে কর্মী সংখ্যা ও অস্ত্র কেনার পরিমাণ কমাতে হবে; যা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুলিশকে পিছিয়ে দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের সময় বিক্ষোভকারীদেরও সামলাতে হবে নতুন পুলিশ কমিশনারকে। ট্রাম্পের সফর নিয়ে পুরো যুক্তরাজ্যেই উত্তেজনা চলছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও দশককাল আগে ক্রেসিডা ডিকের নেতৃত্বে এক অভিযানে নিরপরাধ এক ব্রাজিলীয় যুবক পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

২০০৫ সালের জুলাইয়ে দক্ষিণ লন্ডনের স্টকওয়েল আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেটে আত্মঘাতী সন্ত্রাসী ভেবে ২৭ বছর বয়সী ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জন চার্লস দে মেনেজেসকে গুলি করে পুলিশ।

পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, চার্লসকে তারা জঙ্গি হুসেইন ওসমান ভেবে গুলি করে। ওসমান ও মেনেজেস একই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে থাকতেন।

ওই অভিযানের আগের দিন ওসমানসহ চার জঙ্গি লন্ডনের ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক ও পুলিশের উপর হামলা চালানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালায়।

চার্লসকে গুলি করার সময় লন্ডনজুড়ে চলছিল ‘সর্বোচ্চ সতর্কতা’।  তার দুই সপ্তাহ আগে চার ব্রিটিশ মুসলিম যুবক লন্ডনের তিনটি পাতাল রেল ও একটি বাসে হামলা চালিয়ে ৫২ জনকে হত্যা করার পর ওই সতর্কতা জারি করা হয়।

চার্লসের নিহত হওয়ার ঘটনায় লন্ডন পুলিশকেই দায়ী করেছিল ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস। অবশ‌্য গুলির সঙ্গে ডিকের কোনো যোগসূত্র মেলেনি বলে গত বছর দেওয়া ওই রায়ে জানানো হয়।

ব্রাজিলে থাকা চার্লসের পরিবারের সদস্যরা বিবিসিকে বলেছেন, ডিকের নিয়োগকে তারা ভালোভাবে নিতে পারছেন না। লন্ডনের মেয়র সাদিক খানকে এই নিয়োগে ভিটো দিতে অনুরোধ করেছেন তারা।

ওই ঘটনার দুই বছর পর ডিককে লন্ডন পুলিশের ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার করা হয়, যে পদের দায়িত্ব ছিল রাজপরিবার এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

ডিক পরে ব্রিটিশ পুলিশের জ্যেষ্ঠ সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন; ২০১২ সালে লন্ডনে অলিম্পিক গেমস চলার সময় তাকে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালকও করা হয়।