ট্রাম্পের মন্তব্যে হতভম্ব সুইডেন, ব্যাখ্যা দাবি

এক সমাবেশে সুইডেনে অভিবাসী-সম্পর্কিত একটি সংঘর্ষের ঘটনার উল্লেখ করে সুইডেনকেই হতভম্ব করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প, কেননা আদতে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

>>রয়টার্স
Published : 20 Feb 2017, 08:10 AM
Updated : 20 Feb 2017, 08:10 AM

নিজের ওই কথার ব্যাখ্যায় রোববার ট্রাম্প দাবি করেছেন, একটি টেলিভিশন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি ওই মন্তব্যটি করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন মাত্র এক মাস ধরে, কিন্তু এরই মধ্যে ট্রাম্প বহু ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন, এজন্য সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপসহ চার মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের শরণার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন, সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন।

শনিবার এক সমাবেশে অভিবাসী ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, অভিবাসীদের নিয়ে খুবই সমস্যায় আছে সুইডেন।

“দেখেন গতরাতে সুইডেনে কী হয়েছিল। সুইডেন, কে এটি বিশ্বাস করবে? সুইডেন। তারা বিপুল সংখ্যককে (অভিবাসী) গ্রহণ করেছে। যা কখনো সম্ভব বলে চিন্তাও করেনি তেমন সমস্যায়ই এখন তাদের পড়তে হচ্ছে,” বলেন তিনি।

কিন্তু ট্রাম্পের কথিত ওই ‘রাতে’ সুইডেনে কোনো ঘটনাই ঘটেনি, দেশটির হতভম্ব সরকার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ট্রাম্পের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেছে।

এ বিষয়ে এক টুইটে ব্যাখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, “সুইডেনে কী হচ্ছে, এই বিষয়ে আমার বিবৃতি অভিবাসী ও সুইডেন নিয়ে ফক্সনিউজের সম্প্রচার করা একটি প্রতিবেদনের সূত্রে করা হয়েছে।”

ট্রাম্প প্রায়ই ফক্সনিউজের প্রশংসা করে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই নিউজ চ্যানেলটিতে শুক্রবার সুইডেনের অভিবাসীদের কথিত অপরাধ সমস্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখায়। 

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বলেছেন, ট্রাম্প স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটির কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা নিয়ে নয়, অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে কথা বলছিলেন।

সুইডেনের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকেই দেশটিতে অপরাধ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। সিরিয়া ও ইরাকের মতো গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশগুলো থেকে লাখ লাখ শরণার্থী নেওয়া সত্বেও দেশটিতে অপরাধের হার হ্রাস পাওয়ার এই ধারা অব্যাহত আছে।

ট্রাম্পের মন্তব্যে হতভম্ব সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্যাটারিনা অ্যাক্সেলসন বলেছেন, “আমরা পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার চেষ্টায় আছি।”

যুক্তরাষ্ট্রে সুইডেনের দূতাবাস জানিয়েছে, সুইডেনের অভিবাসন ও তাদের আত্মীকরণ কৌশলের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে তথ্য সরবরাহ করার অপেক্ষায় আছেন তারা।

এর আগেও কোনো স্বাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই মন্তব্য করে বেকায়দায় পড়েছেন ও সমালোচনার শিকার হয়েছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার এক টুইটে সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গট ওয়ালস্ট্রম বলেছেন, “গণতন্ত্র ও কূটনীতিতে সফল হওয়ার জন্য বিজ্ঞান, ঘটনার সত্যাসত্য এবং গণমাধ্যমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া দরকার।” 

সুইডেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল বিল্ড বলেছেন, “সুইডেন? সন্ত্রাসী হামলা? তিনি কি ধূমপান করছিলেন? প্রশ্নের অন্ত নেই।”

অন্যান্য সুইডেনবাসীরা টুইটারে বল্গা হরিণ, মিটবল ও ফার্নিচারের ছবি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করে ট্রাম্পকে উপহাস করেছেন।

এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, “#লাস্টনাইটইনসুইডেন আমার ছেলের হটডগটি ক্যাম্প ফায়ারের আগুনে পড়ে গেছে। খুব দুঃখজনক!”